অষ্টম শ্রেণি বাংলা বোঝাপড়া কবিতা অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / bojha para poe class 8 bangla
![]() |
বোঝাপড়া কবিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হাতে-কলমে
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন?
উঃ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত 'ভারতী' এবং 'বালক' পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখেতেন।
১.২ ভারতের কোন্ প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসাবে গাওয়া হয়?
উঃ। ভারতের প্রতিবেশী দেশ "বাংলাদেশে" তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।
২. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ ‘সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।'— কোনটি সবার চেয়ে শ্রেয়?
উঃ। আলোচ্য পঙ্ক্তিটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'বোঝাপড়া' পাঠ্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।
উক্তিটিতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে জীবনে চলার পথে যেখানে বিপদের আশঙ্কা করা হয় না এমন ক্ষেত্রেও সেখানে বড়ো বিপদ ঘনিয়ে আসাটা অসম্ভব নয়। কিন্তু সবার সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করলেই যে আমরা বিপদমুক্ত হতে পারব না, এই সহজ সত্যটা আমরা বুঝতে হবে। কবি তাই আমাদের বুঝিয়েছেন, ঝগড়া বিবাদ না করে, আঘাত পেয়ে তলিয়ে যাওয়ার চেয়ে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে, সহ্য করে ভেসে থাকাই সবচেয়ে শ্রেয় বা উপযুক্ত।'
২.২ ঘটনা সামান্য খুবই।'— কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উঃ। আলোচ্য পঙ্ক্তিটি 'বোঝাপড়া' কবিতা থেকে গৃহীত।
আলোচ্য কবিতাটিতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের জীবনে সাধারণ ঘটনাই অনেক সময়
বড়ো করে দেখা হয়। আবার সামান্য ঘটনাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে ঘটনাটি গুরুত্বহীন হয় । বরং ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকে স্বাভাবিক ঘটনা মনে করলেই সবদিক থেকে শ্রেয়। তাই কবি বলেছেন মনকে এই বলে বোঝাতে হবে যে ভালো মন্দ যাই আসুক না কেন সেই বাস্তব সত্যকে সহজে মেনে মনের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করাই সঠিক কাজ ।
২.৩ ‘তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।'—উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করো।
উঃ। আলোচ্য উদ্ধৃতিটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বোঝাপড়া' কবিতার অংশ।
আলোচ্য কবিতায় কবি মনের সঙ্গে বোঝাপড়ার কথা বলেছেন। পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ একে অপরের কথা ভাববে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে একে অন্যের মনের মতোই হবে। এমন হতেই পারে যে একজন মানুষ অন্য মানুষের মনের মতো নয় অথবা আমি বা আমরা অন্যের মতো হয়ে উঠিনি। কিন্তু কোন চাওয়া পাওয়ার আশা না করে একে অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ক্ষতি কী? আন্তরিকতার সাথে হাত বাড়ালে বন্ধুর অভাব হবে না। আর অন্তর থেকে সবকিছুকে আপন করে নিলে, তবে অনেকখানি সুখ পাওয়া
যাবে বলে কবি মনে করেছেন।
২.৪ 'মরণ এলে হঠাৎ দেখি/মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।'—ব্যাখ্যা করো।
উঃ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বোঝাপড়া' কবিতার গুরুত্বপূর্ণ একটি পক্তি।
মানুষ অনেক সময় নিজের বাঁচার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে। সে অনেক সময়ই মরতে চায়। মৃত্যুই তার কাম্য হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় যখন মৃত্যু মানুষের একেবারে কাছে চলে আসে তখন কিন্তু মানুষ মরতে চায় না। মানুষ তখন বাঁচতে চায়।
প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কামনা করা মানুষ তখন জীবনের প্রতি দয়াবান হয়ে ওঠে। তার কাছে তখন মৃত্যু নয় বেঁচে থাকাটাই পরম কাম্য হয়ে ওঠে। মৃত্যুকে বাদ দিয়েই তার জীবন তার কাছে মস্ত বড়ো হয়ে ওঠে। জীবনকে তখন সে ভালোবাসতে শুরু করে এবং একই সঙ্গে জীবনের গুরুত্ব অনুভব করে। জীবনকে নতুন আলোকে দেখতে দেখতে তার মন যেন প্রকৃত সত্যকে খুঁজে পায়। এখানে কবি জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে জীবনের প্রকৃত জয়গান করেছেন এবং বুঝিয়ে দিয়েছেন মৃত্যু অপেক্ষা জীবন অনেক বড়ো।
২.৫ তাহারে বাদ দিয়েও দেখি/বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।'—উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন্ সত্য প্রকাশ পেয়েছে?
উঃ। আলোচ্য পক্তিটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বোঝাপড়া' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবি বোঝাতে চেয়েছেন, বিচ্ছেদ জীবনের এক অমোঘ নিয়ম। এই বিচ্ছেদ মৃত্যুও হতে পারে আবার মানুষের সঙ্গে মানুষের বিচ্ছেদও হতে
পারে। আমরা সাধারণত এই বিচ্ছেদ সহজে মেনে নিতে পারি না। আমাদের জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন আমরা একজন মানুষের বিচ্ছেদে কষ্ট অনুভব করি, কারণ কোনো ব্যক্তিই জীবনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেই ব্যক্তি যদি নাও থাকে তবুও পৃথিবী একইরকম থাকে। পৃথিবীর স্বাভাবিকতায় কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তাই কবি বলেছেন আকাশ সেইরকমই সুনীল ও সীমাহীন থাকে ভোরের আলো একইরকম মধুর লাগে। কোনো ব্যক্তিবিশেষের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে এই বিশ্বভুবনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোনোরকম পরিবর্তন সূচিত হয় না।
২.৬ কীভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে?
উঃ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বোঝাপড়া' কবিতায় মনের সঙ্গে বোঝাপড়ার কথা বলেছেন। জীবনের সব ঘটনা মানুষের মনের মতো হয় না। এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যা মানুষের আকাঙ্খিত নয়। তাতে মানুষ মুহ্যমান হয়। মানুষ সহজে সেটা মানতে চায় না। তখন তার মনে হয় এমনটা আর কারোর জীবনে ঘটে না। কবি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন মানুষের উচিত মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেওয়া। একমাত্র মনের সঙ্গে বোঝাপড়া হলে তবেই মানুষ যে-কোনো ঘটনায় কাতর হয়ে পড়বে না। যে-কোনো কষ্টকে সে হাসিমুখে মেনে নিতে শিখবে, নিজের সত্ত্বাকে বড়ো করে নিজের জীবনে সে আঁধার ডেকে আনবে না। জীবনের সঙ্গে মনের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে।
২.৭ ‘দোহাই তবে এ কার্যটা / যত শীঘ্র পারো সারো।”—কবি কোন্ কার্যের কথা বলেছেন? সেই কার্যটি শীঘ্র সারতে হবে কেন ?
উঃ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বোঝাপড়া' কবিতায় মনের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক তার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছেন। মানুষ অনেক সময় নিজের অহংকার ত্যাগ করতে পারে না। যার ফলে মানুষ নিজের জীবনকে
নিজেরাই অন্ধকার করে তোলে। এই কারণে মানুষ নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। কবির মতে এভাবে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। মানুষ এতে নিজের পায়ে কুড়ুল মারে।। এতে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা ক্রমশই কমে যায়। লড়াই করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে মানুষ বাঁচার সুখ থেকে বঞ্চিত হয়।। তাই কবি মনে করেন নিজেরা নিজেদের ভাগ্যকে দোষারোপ করার ভুলটা যেন আমরা তাড়াতাড়ি সংশোধন করে উঠতে পারি, তাহলে মানুষের ভালো হবে।
২.৮ কখন আঁধার ঘরে প্রদীপ জালানো সম্ভব ?
উঃ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'বোঝাপড়া' কবিতায় আঁধার ঘরে প্রদীপের যে উদাহরণ দিয়েছেন তা একটি রূপক মাত্র। কবি এখানে মনের অন্ধকারকে দূরীভূত করে সেখানে সত্যের প্রদীপ জ্বালানোর কথা বলেছেন। আমাদের নিজেদের মনের মধ্যে থাকা যে অজ্ঞতার অন্ধকার, সেখানে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতে হবে, তবেই আমাদের মানসিক কষ্ট দূর হবে।ঘটনার মুখোমুখি দাড়ানোর সামর্থ অর্জন করলেই তার জীবনের
বিপর্যয় কেটে যাবে। আর তখনই জীবনের আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো সম্ভব হয়ে উঠবে।
২.৯ ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে / কতটুকুন তফাত হলো।'— এই উদ্ধৃতির মধ্যে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন্ পথের ঠিকানা মেলে ?
উঃ। আলোচ্য পাঠ্যাংশে কবি বলতে চেয়েছেন, জীবন হলো এক চলমান সত্য।জীবনে চলার প্রথম শর্তই হলো সত্যকে মেনে নেওয়া, কারোর সঙ্গে নিজের তুলনা না করা। কিন্তু আমরা অনেক সময়ই একথা ভুলে যাই। একে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে থাকি। ধনী-দরিদ্রের, উচ্চশিক্ষিত- স্বল্পশিক্ষিতের তফাত করি।
তাই কবি আমাদের সঠিক পথ নির্দেশ করে বলেছেন যে, জীবনে ভুলে যেতে হবে কার সঙ্গে কার কতটুকু তফাত রইল। ভেদাভেদ ভুলে যা সত্য ও বাস্তব তাকেই আপন করে নিতে হবে। তবেই চলার পথ হবে বাধাহীন ও আনন্দময়।
২.১০ 'অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি / এলে সুখের বন্দরেতে, – 'ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা' বলতে কী বোঝো?
উঃ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বোঝাপড়া' কবিতায় জীবনের সত্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
কবির ভাষায় ‘ঝঞ্ঝা। হলো , আমরা অনেক সময় পথ চলতে গিয়ে অনেক বাধা'র মুখোমুখি হওয়া। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে সেই 'ঝঞ্ঝা' মানুষ কাটিয়ে ওঠে, পেরিয়ে যায় নানা বাধা-বিপত্তি। এভাবে বাধা বিপদ কাটিয়ে যখন স্বস্তি মেলে তখন মানুষ যেন সুখের সাগরে ভাসে। সে মনে করে যে দুঃখ বলে জীবনে কখনো কিছুই যেন ছিল না। মানুষ একসময় ভুলেই যায় যে কি বিপদের মধ্যে দিয়ে সে এই পথটা অতিক্রম করেছে। মানুষ একদিন বিপদ থেকে নিজেকে উদ্ধার করার মানসিক শক্তিও অর্জন করে, নতুন আলোর সন্ধান করে। একেই কবি ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা' বলতে চেয়েছেন।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৩.১ ভালো মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে।'—তুমি কি কবির সঙ্গে একমত? জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কীভাবে অতিক্রম করতে চাও ?
উঃ। আলোচ্য অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'বোঝাপড়া' শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া।
কবি আলোচ্য অংশে সত্যকে মেনে নিতে বলেছেন। এটা ঠিক যে আমরা সর্বদা সত্যকে মেনে নিতে পারি না। কিন্তু যাই হোক না কেন সত্যকে মেনে নেওয়াই উচিত। তাহলে জীবনে জটিলতা কমবে, মানসিক কষ্টও কম হবে। এই বিষয়ে আমি কবির সঙ্গে একমত। মানুষের জীবনে নানা বাধা-বিপত্তি, যন্ত্রণা-কষ্ট আসবেই এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। বাধাহীন জীবন হওয়া সম্ভব নয়। জীবনে আসা নানা বাধা সঠিকভাবে অতিক্রম করার নামই জীবনের পথ চলা। আমরা ছাত্রছাত্রীরা এখনো জীবনের বৃহত্তর পথ অতিক্রম করিনি। কিন্তু আমরা জানি জীবনের পথ মসৃণ নয়। সেখানে চলতে গেলে বাধা আসবে, পড়ে যাব কিন্তু থেমে গেলে চলবে না। পড়ে গেলে ধুলো ঝেড়ে উঠে আবার পথ চলতে হবে। এভাবে জীবনে চলার পথের বাধাকে আমি অতিক্রম করতে চাই।
৩.২ ‘মনেরে আজ কহ যে,/ ভালো মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে।' – কবির মতো তুমি কি কখনও মনের সঙ্গে কথা বলো? সত্যকে মেনে নেবার জন্য মনকে তুমি কীভাবে বোঝাবে একটি পরিস্থিতি কল্পনা করে বুঝিয়ে লেখো।
উঃ হ্যাঁ। যখন কোনো অভাবনীয় পরিস্থিতির সামনে আমি পড়ি তখন কীভাবে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করব তা মানের সঙ্গে আলোচনা করে থাকি। যদি কখনো এমন পরিস্থিতি হয় যে, আমি কোনো পরীক্ষায় ভালো ফলল করতে পারলাম না। তখন এই পরিস্থিতিকে মানিয়ে চলার জন্য আমি মনকে নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করব।
মনে করি আমি এবছর শেষ পরীক্ষায় অঙ্কে ভালো ফল করতে পারলাম না। আমি কখনো একরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমি এই পরিস্থিতিকে মেনে নিতে পারব না। কেন না আমি ছাত্র হিসেবে খুব ভালো হলেও অকৃতকার্য হবার মতো পড়াশোনা করিনি। তবে আমি এটা মেনে নেব। এটা যে সত্য তা আমি মনকে বোঝাবো। আমি ভাববো যে নিশ্চয় আমার এবছর পরীক্ষার প্রস্তুতি যথাযথ হয়নি। নিঃসন্দেহে আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পড়িনি। আমার গণিতের অভ্যাস যথাযথ হয়নি এবং অনুশীলনে ফাঁকি দিয়েছি। অর্থাৎ পুরো ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে তবেই আমি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছব। পাশাপাশি এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে নতুন করে।প্রস্তুতি শুরু করারও শপথ নেব।
৩.৩ তেমন করে হাত বাড়ালে/ সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।'— 'তেমন করে' কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। এখানে কবি কী ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন – লেখো।
উঃ। যদি কোনো মানুষ কোনো মানুষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে সেই বন্ধুত্বও তার কাছে ফিরে আসে। মানুষের সাজো মানুষের যে স্বাভাবিক ভেদাভেদ তাকে বড়ো করে, গুরুত্ব দিয়ে না দেখে যদি কেউ আরেকটি মানুষের দিকে সহজ সাধারণ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে যে সুখ-শান্তি মেলে তা অন্য কোনো কিছুতে মেলে না। একে অন্যকে ভালোবাসবে, শ্রদ্ধা করবে, ভক্তি করবে এটাই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু অনেক সময়ই মানুষ একে অন্যকে ঈর্ষা করে, কেউ কাউকে দেখতে পারে না, একে অন্যের অমঙ্গল কামনা করে।
কিন্তু যদি মানুষ একে অন্যের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে সত্যিই জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে। কারণ মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব ভিন্ন কোনো সম্পর্কই যথাযথ নয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্কে যে সুখ, যে শাস্তি মেলে তা অন্য কিছুতে মেলে না। কবি যে সুখের ইঙ্গিত দিয়েছেন তা পার্থিব নয় তা একধরনের অপার্থিব সুখ ও শান্তি, আনন্দের ভাণ্ডার। হিংসা নয়, বিদ্বেষ নয়, ভালোবাসার কথাই কবি এখানে বলতে চেয়েছেন এবং তিনি সেই সুখেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
৪. নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্ত দল ও রুদ্ধ দল চিহ্নিত করো :
উঃ। বোঝাপড়া = [বো] [ঝ] [প]-[ড়া] । চারটি মুক্তদল
কতকটা = [ক]—[ত]—( টা]→[ত] রুদ্ধদল। বাকি দুটি মুক্তদল।
সত্যেরে = [সত]-[তো [রে]→[সত্] বুদ্ধদল। বাকি দুটি মুক্তদল।
পাঁজরগুলো = [পাঁ]-[জ][গ]-[লো]→ [জ] রুদ্ধদল। বাকি তিনটি মুক্তদল।
বিশ্বভূবন = [বিশ]-1]-[3]-[বন][বিশ) এবং [বন্] — রুদ্ধদল। বাকি দুটি মুক্তদল।
অশ্রুসাগর = [শ]—(র)-(সা)-(গর্→[অ] এবং [গর্] রুদ্ধদল। বাকি দুটি মুক্তদল।
৫. নীচের প্রতিটি শব্দের তিনটি করে সমার্থক শব্দ লেখো :
মন-সমার্থক শব্দ চিত্ত
অন্তর -সমার্থক শব্দ-হৃদয়।
জখম - সমার্থক শব্দ-ক্ষত,
আঘাত -সমার্থক শব্দ-ঘা।
ঝঞ্ঝা-সমার্থক শব্দ-ঝাটিকা
ঝগড়া - সমার্থক শব্দ-বিবাদ,
সামান্য-সমার্থক শব্দ-অল্প
ভয়-সমার্থক শব্দ- সংশয়
আকাশ -সমার্থক শব্দ গগন।
৬. নীচের প্রতিটি শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ দিয়ে শব্দজোড় তৈরি করে বাক্য রচনা করো ?
উঃ। আঁধার > আঁধার-আলো> আধার আলো পরিবেশে ভয় ভয় লাগে।
সত্য> সত্য- মিথ্যা> ঘটনাটি সত্য মিথ্যা না জেনে বিচার করা উচিত নয়।
দোষ> দোষ-গুণ> মানুষের মধ্যেই দশগুণ লুকিয়ে থাকে।
আকাশ> আকাশ -পাতাল > বেশি আকাশ পাতাল ভাবনা করা উচিত নয়।
সুখ> সুখ -দুঃখ> সুখ দুঃখ নিয়ে মানুষের জীবন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
পাঠ মূল্যায়নের বাইরের প্রশ্ন
★ মনকে কবি কোন্ কথাটি বোঝাতে বলেছেন ?
উঃ। ভালোমন্দ যা-ই আসুক সত্যকে সহজে নিতে হবে এই কথাটি কবি মনকে বোঝাতে বলেছেন।
★ মানুষের ভাগ্য কীরকম? উঃ । মানুষের ভাগ্য এমন নয় যে সে সবরকম জখম বাঁচিয়ে যাবে।
★ মনে কখন ধাক্কা লাগে ?
উঃ। অনেক কষ্টের পরে যখন মানুষ সুখের মুখ দেখে তখন যদি হঠাৎ শঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসে তখন মনে ধাক্কা লাগে।
★ কোনটি শ্রেয় পন্থা ?
উঃ। যদি কেউ ভাগ্যের পরিহাসে কিছু হারিয়ে ফেলে এবং মানুষের সঙ্গে ক্রমাগত ঝগড়া করে তবে তা মোটেই ঠিক নয়। বরং বিপদকে দেখে তলিয়ে না গিয়ে যদি ভেসে থাকতে পারে, সবার সঙ্গে মিলে থাকতে পারে তবে সেটাই শ্রেয় পন্থা।
★ সেইখানে হয় জাহাজডুবি'— বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উঃ। যখন মানুষ বিপদের আশঙ্কা করে না তখনই বিপদ আসে। সমুদ্রের তলদেশে থাকে বরফের পাহাড়। সেই পাহাড়ের চূড়া কেউ দেখতে পায় না। ফলে সেইখানেই পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে জাহাজডুবি হয়ে থাকে। আশঙ্কার কালো মেঘের লেশমাত্র যখন থাকে না তখনই সবচেয়ে বড়ো বিপদ ঘনিয়ে আসে।
★ কখন বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর লাগে ?
উঃ। মানুষ যখন কোনো ব্যক্তির জন্য দারুণ কষ্ট পায়, দুঃখ পায়, মনে ভাবে যে এই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে সে কীভাবে বেঁচে থাকবে? তখন একসময় দেখা যায় যে সেই ব্যক্তি যদি নাও থাকে তাহলেও বিশ্ব-সংসার খুবই বৃহৎ একটি স্থান
বলে মনে হয়। উদ্দিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে অবস্থার খুব বেশি হেরফের হয় না।
★ মানুষের সঙ্গে মানুষের তফাত হলে কী হয় ?
উঃ। মানুষের সঙ্গে মানুষের তফাত হয় তখনই যখন মানুষ নিজের চেয়ে প্রাধান্য দেয় নিজের অংকারবোধকে।
মানুষের সঙ্গে মানুষের তফাত আসলে চোখে দেখা যায় না। এই তফাত মানসিক তফাত। মানুষে মানুষে এই পার্থক্য মানুষকে পর করে দেয়, সে অন্যের কথায় ভালো করে গুরুত্বও দেয় না।
★ টানাটানি কীসের জন্য হয় ?
উঃ । মানুষে মানুষে তফাত কিংবা মানুষে মানুষে ভেদাভেদের কারণেই টানাটানি চলে।
★ মরার চেয়ে বাঁচা ভালো কেন?
উঃ। মৃত্যু মানে সব কিছুর অবসান। অনেকে মনে করেন মৃত্যু শান্তি নিয়ে আসে। কিন্তু যখন সত্যি সত্যি মৃত্যু এসে করাঘাত করে তখন মানে হয় বেঁচে থাকা অনেক বেশি ভালো। কারণ জীবনের অর্থ হল রূপ-রস-গন্ধ-ভরা পৃথিবীকে উপভোগ করা। জীবন সর্বান নতুন কিছুর কথা ভাবে, সে মনকে নিয়ে যায় নতুন কিছুর সন্ধানে। তাই মরার চেয়ে বাঁচা ভালো।
★ মনেরে তাই কহো যে কী মনকে বলা উচিত?
উঃ। মনকে সর্বদা সত্যকে গ্রহণ করার কথা বলা উচিত। ভালোমন্দ যাই আসুক সত্য যে সর্বদা গ্রহণীয়, তাই মনকে জানানো উচিত।
• রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
★ নিন্ধাতার আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম— কোন ঘটনা মান্ধাতার আমল থেকে চলে আসছে বলে কবি ইঙ্গিত করেছেন ?
উঃ সব মানুষ একরাম তথা না। তাই কবি বলেছেন কেউ ভালোবাসতে চায় আবার কেউ ভালোবাসতে পারে না। কেউ নিজেকে বিকিয়ে দেন, আবার কেউ বা জীবনে সিকি পয়সাও স্বার্থত্যাগ করতে পারে না। এ স্বভাব মানুষের মধ্যে থেকেই যায়। এই বোধহয় বিশ্বভুবনের রীতি রেওয়াজ। সবাই যেন সবার জন্য হতে পারে না। একদল আমাদের কাকি দেবে, ভুলিয়ে রাখবে। আবার আমরাও কিছুটা ফাঁকি দেবো কাউকে। এই জগতের নানা বস্তুর মধ্যে কিছুটা যদি আমরা জোর করি তাহলেও আলোর ভোগের জন্যও কিছুটা বাকি থেকে যায়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি চলে আসছে।
★ প্রশ্ন বোঝা পড়া কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।
উত্তর-কবিতাটি ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। সাধারণত বোঝাপড়া
টি মানুষের মা হয়। কিন্তু এখানে কবি মোর দুজন ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে বোঝাপড়ার কথা বলেননি। তিনি মানুষের বোনের কথা বলেছেন। মানুষ অপেক্ষা অধিকাংশ সময়ে মানুষের নিজের
ছাঁয়া তো হতে পারে। সে কিছুতেই অন্যের কাছে নত হতে চায় না। সে ভাবে যে এর ফলে হয়তো বা তার নিজের মোছেন। তিনি জাতি একটি বিশেষ রাকা। এই করা সম্ভব নয় তা মানুষ বোঝে না সে কেবল নিজের
সেই বোঝাপড়ার কথা, সেই মানসিক যোগাযোগের কথাই বলতে মানিয়ে চলার কথা কবি বলেছেন। মানিয়ে চলা হলো জীবনের চেয়ে দেয়। যে পারে না সে অন্যের ওপর দোষারোপ করে এর দোষ দেখার চেষে নিজের ত্রুটিগুলি সংশোধন করা যে অনেকাংশে শ্রেয়। তাই বোঝাতে চেয়েছেন। তাই কবিতার নানা তিনি 'বোঝাপড়া দিয়েছেন। বিশ্বকবির এই নামকরণের পিছনে যে ভাবার্থ হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই 'বোঝাপড়া' নামটি সার্থক হয়েছে।