জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা || প্রবন্ধ রচনা - school book solver

Wednesday, 5 November 2025

জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা || প্রবন্ধ রচনা




 প্রবন্ধ রচনা

জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা

“অনির্বাণ ধর্ম আলো সবার ঊর্ধ্বে জ্বালো জ্বালো সংকটে দুর্দিনে।”
ভূমিকা: ভারতবর্ষ বহু জাতি ও সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। যুগে যুগে শক হুণদল পাঠান মোগল' ছাড়াও আরও নানা জাতি ও ধর্মের মানুষ এসে মিলেছে এই মহামানবের সাগরতীরে'। ফলে ভারতবর্ষের মূলমন্ত্র হল—
“বহুর মধ্যে ঐক্য উপলব্ধি, বিচিত্রের মধ্যে ঐক্যস্থাপন—ইহাই ভারতবর্ষের অন্তর্নিহিত ধর্ম।” অন্যদিকে সমগ্র দেশের ভরসা তথা জাতির
মেরুদণ্ড হল ছাত্রসমাজ। লেখাপড়া ও খেলাধুলা ছাড়াও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি, সমাজ-পরিবেশ ছাত্রসমাজকে প্রভাবিত করে। তাই ভারতবর্ষের আত্মা নিহিত আছে যে সম্প্রীতির ধারণার মধ্যে, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব অনেকটাই বর্তায় ছাত্রসমাজের উপর।
জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার কারণ : বহু প্রাচীনকাল থেকে নানা জাতি ও ধর্মের মানুষ একত্রে ভারতবর্ষের মাটিতে বসবাস করছে। আধুনিককালে কিছু সংকীর্ণ মানসিকতার মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতার দ্বারা দেশের মেরুদণ্ড শিথিল করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে প্রায়ই দেখা গেছে জাতিগত ও ধর্মীয় ভেদবুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে দেশবাসীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে সরকার। কখনও হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে, কখনো-বা হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেই তৈরি হয়েছে এধরনের ভেদাভেদ। অথচ এই ভারতবর্ষই বুদ্ধ, নানক,
কবীর, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের জন্মদাত্রী। আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এই জাতিভেদ প্রথা বা অস্পৃশ্যতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারিনি। যে জাতির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নিরক্ষর, সে জাতিকে
যে কুসংস্কার পাকে পাকে বেঁধে রাখবে, তা বোঝা খুবই সহজ।
জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার পরিণাম : জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা মনুষ্যত্বের অপমান। কোনো মানুষকে তার জন্মগত পরিচয় নিয়ে বিদ্রূপ করা বা দূরে ঠেলে রাখা অমানবিকতার নামান্তর। এই অমানবিকতা যখন ছোটো গণ্ডি পার করে বৃহত্তর সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, তখন জ্বলে ওঠে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আগুন। দেশ ও দশের ধন সম্পদ ও প্রাণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মস্থান আক্রান্ত হয়। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়, ভারতের বাইরেও দেশের মাথা হেঁট হয়ে যায়। এই প্রশান্তির ফলে বৈদেশিক সম্পর্কের উপরেও বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ:  সারা দেশ জুড়ে জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার নামে চলতে থাকা হিংসাত্মক ঘটনা ও ধর্মীয় সংঘাত নিবারণে ছাত্রসমাজ এক বিরাট ভূমিকা নিতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে মানবিক গুণের বিকাশের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে একাত্ববোধ জাগানো সম্ভব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। পারস্পরিক সহনশীলতা ও ধীরি বোধ জাগ্রত হলে ধর্ম ও জাতির ব্যবধান মুছে দিতে পারবে তারা। তারাই তাদের অভিভাবকদের তথা সমাজের অবুঝ মানুষগুলিকে বোঝানোর দায়িত্ব নিতে পারবে যে, সবাই একই ভারতমাতার সন্তান। সকলের চামড়ার নীচে শিরায় বইছে একই রক্ত। প্রতিটি ছাত্রকে অন্তত একজন নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষর করে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষার বিস্তারই পারবে জাতিভেদ প্রথা ও অস্পৃশ্যতার মতো অন্ধ কুসংস্কারকে চিরতরে দূর করতে।
উপসংহার: ছাত্রসমাজ দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। এই প্রজন্ম যদি শুভবুদ্ধি দ্বারা চালিত হয়ে মানবিকতাকেই একমাত্র আদর্শ বলে মেনে নেয়, তবে ভবিষ্যতে এক জাতিভেদহীন, অস্পৃশ্যতামুক্ত ভারতবর্ষ গঠিত হওয়া অসম্ভব
থাকবে না। সব ধর্মকে মর্যাদা দিয়ে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি করাই সকল ভেদাভেদ দূর করার একমাত্র উপায়।