গল্পের বিষয়সংক্ষেপ দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য ফোর্থ সেমিস্টার
![]() |
ডাকঘর
দ্বাদশ শ্রেণী
বিষয়সংক্ষেপ
'ডাকঘর' নাটকের কাহিনি খুব সরল, জটিলতা বর্জিত। মাধবদত্ত নিঃসন্তান, মধ্যবিত্ত মানুষ। অমল তাঁর স্ত্রীর দূরসম্পর্কের ভাইপো। আসলের মা আগেই মারা গিয়েছে, বাবা কিছুদিন হল গত হয়েছে। নিরাশ্রয় বালকটিকে মাধবদত্তের স্ত্রীর তাড়নায় সম্ভবত দায়ে পড়ে বাপ-মা-হারা আত্মীয়কে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। নিঃসন্তান দম্পতি অমলকে পেয়ে সন্তানসুখ অনুভব করতে থাকেন। অমল খুবই অসুস্থ, বস্তুত মৃত্যুপথযাত্রী। কবিরাজের মতে অমলের আয়ু যদি বাড়াতে হয় তাহলে বাইরের আলো হাওয়া গায়ে লাগতে দেওয়া যাবে না। শেষপর্যন্ত অমলকে ঘরে বন্দি করে রাখে এবং পথের পাশে জানালার ধারে বসে থাকার অনুমতি পায়।
সেই পথ দিয়ে নানা ধরনের মানুষ পায়, অমল তাদের কারোর কারোর সঙ্গে ডেকে কথা বলে। জানালার পাশে বসে তার আলাপ হয়েছে দইওয়ালা, প্রহরী, মোড়ল, সুধা বা খেলতে যাওয়া ছেলের দলের সাথে। দইওয়ালার সাথে কথা বলার সূত্রে পাঁচমুড়া পাহাড়ের কোলে, শ্যামলী নদীর ধারের গ্রাম যেন অমল তার কল্পনার চোখ দিয়ে দেখতে পায়। অমলের সাথে কথা বলতে বলতে দইওয়ালাও যেন ভুলে যায় তার দইয়ের পসরা ফেরী করার কথা। অমলের কল্পনায় আঁকা তার গ্রামের ছবি তাকে মুগ্ধ করে, হয়তো সবটা বাস্তবের সাথে মেলে না।প্রহরীকে দেখে সবাই ভয় পায়, কিন্তু অমল পায় না। প্রহরীর ঘণ্টার মধ্যেও অমল আবিষ্কার করে সেই সংগীত, যা চারপাশের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে। অমলকে প্রহরীর বেশ মজার মনে হয়, অমল তাকে প্রতিদিনের চেনা জীবনের বাইরে অন্যরকম অভিজ্ঞতার স্বাদ এনে দেয়। প্রহরীর মুখ থেকেই অমল জানতে পারে তার ঘরের কাছাকাছি রাজার ডাকঘর বসেছে এবং একদিন তার নামেও চিঠি আসতে পারে। শুনে অমলের মন কল্পনায় পাখা মেলে দিতে থাকে। প্রহরীর ঘণ্টার মধ্যে যেন অমল সুদূরের আহ্বানধ্বনি শুনতে পায়। নাটকের পঞ্চানন মোড়লকে সবাই ভয় পায়, এড়িয়ে চলতে চায়। মোড়ল অমলের কল্পনার ভুবনকে প্রশ্রয়ের চোখে দেখে না। অথচ অমলের মতে মোড়লমশাইয়ের জন্যই রাজা তাকে চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। অমলের এই ব্যবহার মোড়লের কাছে ‘ভারি আস্পর্ধা’ মনে হয়েছে। এরপরেই অমলের সাথে দেখা হয়েছে ঝমঝম করতে করতে ছুটে যাওয়া সুধার। শশী মালিনীর মেয়ে, ফুল তোলা, মালা গেঁথে বিক্রি করা তার কাজ। তার দাঁড়াবার সময নেই। অমলের মতো বসে থাকতে পারলে বেনে বউ পুতুল, পুষি মেনিকে নিয়ে খেলতে পারত। অমলের সাত ভাই চম্পার পারুলদিদি হওয়ার সময় নেই। অমলকে কথা দিয়ে যায় ফুল তুলে ফেরার সময় তাকে ফুল দিয়ে যাবে। শেষপর্যন্ত সুধা তার কথা রাখে, ফুল দিয়ে আসে, কিন্তু ততক্ষণে অমল চিরঘুমের রাজ্যে যাত্রা করেছে। বাইরের মানুষের মধ্যে সবার শেষে আসে ছেলের দল। তারা দল বেঁধে খেলতে যাচ্ছে চাষ-খেলা, যে খেলায় দুজন দুই গোরু হবে এবং একটা লাঠিকে তারা লাঙল বানাবে। তারা সমস্ত দিন খেলে সন্ধ্যার সময় নদীর ধার দিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসবে। তারা অমলের মতো কবিরাজের কথা শুনে ঘরে বসে থাকতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত অমল নিজের খেলনাগুলি দিলে সেগুলি নিয়ে শরকাঠিকে বন্দুক সাজিয়ে তারা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে থাকে। অমল শিশু হলেও অন্য শিশুদের মতো জীবনীশক্তি না থাকায় এক সময় তার ঘুম পেয়ে যায়। ঘুমানোর আগে ডাক-হরকরার নাম জেনে নেয় এবং কাল সকালে যখন আসবে তখন একজন ডাক-হরকরাকে যেন চিনিয়ে দেয় এ কথার আশ্বাস পেয়ে অমল ঘুমিয়ে পড়ে। অমল আরও অসুস্থ হয়ে শয্যাগত, তার বিছানার পাশে এসে ঠাকুরদা নানা কল্পিত দেশের কাহিনি শোনাতে থাকে, যাতে মৃত্যুপথযাত্রী অমল ও মৃত্যুকে যেন সামান্য সময়ের জন্য হলেও ভুলে থাকতে পারে। ক্রৌঞ্চদ্বীপ, পাখিদের দেশ, হালকা দেশের কথা জানতে পারে। অমল ঠাকুরদার সাথে রাজার কাছে ভিক্ষা করতে যাওয়ার বাসনা প্রকাশ করে। অমল অন্ধ খোঁড়া ছিদামকে চাকার গাড়িতে করে ঠেলে ঠেলে ভিক্ষা করতে সাহায্য করবে, তাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো যাবে। এদিকে অমলকে কবিরাজ পুনরায দেখতে এসে তাঁর ভালো মনে হয় না। মানুষ মৃত্যুর আগে শারীরিক, মানসিক সমস্ত দিক থেকে সুস্থবোধ করে, অমলও খুব ভালো বোধ করছে। অর্থাৎ অমলের চিরবিদায়ের সময় হয়ে এসেছে। রাজদূত জানিয়ে যায় রাত্রি দুই প্রহরের সময় স্বয়ং রাজা আসবেন, তার আগে রাজার প্রধান কবিরাজক পাঠিয়েছেন। রাজকবিরাজ এসেই অমলের ঘরের সমস্ত দরজা-জানলা খুলে দেয় এবং জানায় মাঝ-রাত্রিরে রাজা যখন আসবেন তখন অমল বিছানা ছেড়ে ওঠে তার সাথে বেরোতে পারবে। একসময় মোড়লের কাছ থেকে রাজার চিঠি আসার কথা জানতে পেরেছিল, আর এখন রাজদূত ও রাজকবিরাজের কাছ থেকে রাজার আসার সময়ও জেনে যায়। অমল এবার যেন আস্তে আস্তে সমস্ত চিন্তামুক্ত হয়ে চিরঘুমের রাজ্যে চলে যেতে থাকে। রাজকবিরা অমলের মাথার কাছে বসে ঘরের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে আকাশের তারার
আলো প্রবেশ করার ব্যবস্থা করে দেয়। কেউ যেন অমলের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটায় তার ব্যবস্থা করে, তাই সুধা অমলের জন্য ফুল নিয়ে এলেও সরাসরি হাতে দিতে পারে না। রাজার আগমনে অমলের ঘুম যখন ভাঙবে তখন অমলের হাতে চির প্রেমের চিহ্নস্বরূপ সুধার দেওয়া ফুল তুলে দেবে।
