গাছের কথা || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || অষ্টম শ্রেণি বাংলা - school book solver

Tuesday, 11 November 2025

গাছের কথা || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || অষ্টম শ্রেণি বাংলা

 


অষ্টম শ্রেণীর বাংলা
অধ্যায় ১৩
গাছের কথা
জগদীশচন্দ্র বসু


লেখক পরিচিতি। জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে এখনকার বাংলাদেশের ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদি বাড়ি ছিল ঢাকার রাড়িখাল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম ভগবানচন্দ্র বসু। বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ ও জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র ছেলেবেলায় প্রথমে ফরিদপুর ও পরে কলকাতায় পড়াশোনা করেন। তারপর কেম্ব্রিজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর
ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকরূপে যোগ দেন। জগদীশচন্দ্র বিনা তারে বার্তা প্রেরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি আবিষ্কার করেন উদ্ভিদ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উত্তেজনায় সাড়া দেয়। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএনসি' উপাধি লাভ করেন। তিনি রয়াল সোসাইটির ও লিগ অব নেশনসের ইনটেলেকচ্যুয়াল কো-অপারেশন কমিটির সদস্য ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি, ভিয়েনার অ্যাকাডেমি অব সায়েকের বৈদেশিক সদস্য এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন। জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে 'বসু বিজ্ঞান মন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন। তীব্র বাংলা এককগুলি 'অব্যক্ত' গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এই মহান বিজ্ঞানসাধকের মৃত্যু হয়।

উৎস: 'গাছের কথা' ঠ্যাংশটি জগদীশচন্দ্র বসুর বাংলা প্রবন্ধ সংকলন জন্য অব্যক্ত থেকে নেওয়া হয়েছে। এই রচনাটি 'মুকুল' পত্রিকার ১৩০২ বঙ্গাব্দের আবাঢ় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
বিষয়সাক্ষেপ। 'গাছের কথা রচনায় বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসু গাছের জীবনকথা বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রকৃতি সম্পর্কে নিজের উন্নধিকে প্রকাশ করেছেন। এমন একটা সময় ছিল, যখন একা মাঠে বা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে লেখকের কাছে সব কিছুই কেমন খালি খালি লাগত। কিন্তু যত দিন গেছে, গাছ-পাখি-কীটপতঙ্গকে তিনি ভালোবাসতে শিখেছেন। তাদের কথা বুঝতে শিখেছেন। গাছের মধ্যেও তিনি অনেক মানবিক গুণ লক্ষ করেছেন। মানুষের মতো অভাব, দুঃখকষ্ট, জীবনধারণ করার তাগিদ, অভাবে পড়ে চুরি-ডাকাতির চেষ্টা, এমনকি বন্ধুত্ব বা স্বার্থত্যাগের মতো সগুণও গাছের মধ্যে রয়েছে। মা যেমন নিজের জীবন দিয়ে সন্তানের জীবন রক্ষা করেন, উদ্ভিদজগতেও সেরকম অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যায়। এই প্রবন্ধে লেখক শুকনো গাছের ডাল আর সজীব সবুজ গাছের তুলনা করে জীবনের ধর্ম যে গতি এবং বৃদ্ধি, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। উত্তাপ পেলে যেমন পাখির ডিম থেকে ছানা জন্মায়, তেমনই মাটি, উত্তাপ এবং জল পেলে বীজরূপী ডিম থেকে বৃক্ষশিশুর জন্ম হয়। মানুষের চেষ্টা ছাড়াও গাছের বীজ পাখির সাহায্যে বা বাতাসে ভেসে অন্য জায়গায় পৌঁছোতে পারে। এভাবে জনমানবশূন্য দ্বীপেও গাছের অস্তিত্ব ফুটে ওঠে। ছেলেবেলায় লেখক নিজেও বাতাসে ভেসে বেড়ানো শিমুলৎতুলো আর তার বীজ ধরার জন্য ছুটে বেড়াতেন। বীজের কঠিন আবরণের মধ্যে বৃক্ষশিশু নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকে। বছরের নানা সময়ে বিভিন্ন গাছের বীজ পাকে। আম-লিচুর বীজ বৈশাখ মাসে পাকে, ধান-যবের বীজ আশ্বিন- কার্তিক মাসে পাকে। বাতাসের বেগে বা আশ্বিনের ঝড়ে নানান গাছের বীজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে মাটি, জল ও উত্তাপের সান্নিধ্যে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকে ক্রমশ বৃক্ষশিশু জন্ম লাভ করে।
নামকরণ। যে-কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। নামকরণের মধ্য দিয়েই রচয়িতা তাঁর রচনা সম্পর্কে পাঠকের কাছে আগাম ধারণা দিয়ে থাকেন। সেদিক থেকে আলোচ্য ‘গাছের কথা’ রচনাটির নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে তা আলোচনা করা যায়। একাধারে পদার্থবিদ ও জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু রচিত 'গাছের কথা' শীর্ষক রচনাংশে গাছ সম্পর্কে লেখকের নিজস্ব ভাবনাচিন্তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার কারণেই তিনি গাছের মধ্যে জীবনের খোঁজ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে মানুষেরই মতো দুঃখ, কষ্ট, জীবনধারণের তাগিদ, অভাব-অনটন, পরস্পরকে সাহায্যের প্রবণতা, বন্ধুত্ব, স্বার্থত্যাগ এমনকি হিংসা-চুরি-ডাকাতির প্রবণতাও তিনি লক্ষ করেছেন। গাছের উপমা ব্যবহার করে তিনি জীবিতের ধর্ম আলোচনা করেছেন। ক্রমশ বীজ থেকে কীভাবে বিশাল গাছ হয়—সেই বৈজ্ঞানিক
বিষয়কে তিনি সহজসরল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন। এইভাবেই ক্ষুদ্র বীজৎথেকে বিরাট গাছে পরিণত হওয়ার কথা তাঁর প্রবন্ধের পরিধির মধ্যে আলোচিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, আলোচ্য রচনাংশের ‘গাছের কথা’ নামটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ।




'হাতেকলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর

১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বই হল 'অব্যক্ত'।
১.২ জগদীশচন্দ্র বসু কী আবিষ্কার করেছিলেন?
উত্তর: বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র বসুর বহু আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম একটি হল- ক্রেসকোগ্রাফ।

২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখো।
২,১ লেখক কবে থেকে গাছদের অনেক কথা বুঝতে পারেন ?
উত্তর: ‘গাছের কথা' গদ্যাংশের লেখক জগদীশচন্দ্র বসু যখন থেকে গাছ, পাখি ও নানান কীটপতঙ্গকে ভালোবাসতে শিখেছেন, তখন
থেকেই তিনি তাদের অনেক কথা বুঝতে পারেন।

২,২ “ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।”—কী দেখা যায় ?
উত্তর: মানুষের মধ্যে যেমন সদগুণ বা ভালো কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে, তেমনই গাছেদের মধ্যেও তার কিছু কিছু দেখা যায় বলে লেখক মন্তব্য করেছেন।

২.৩ জীবিতের লক্ষণ কী তা লেখক অনুসরণে উল্লেখ করো।
উত্তর: জীবিতের যে দুটি বিশেষ লক্ষণের কথা লেখক 'গাছের কথা' পাঠ্যাংশে উল্লেখ করেছেন তা হল 'গতি' ও 'বৃদ্ধি'।
২.৪ “বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিজা যায়।”—বৃক্ষশিশু কোথায় নিদ্রা যায় ?
উত্তর: বীজের উপরের কঠিন ঢাকনার আড়ালে বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।

২.৫ অঙ্কুর বের হওয়ার জন্য কী কী প্রয়োজন ?
উত্তর: বীজ থেকে অঙ্কুর বের হওয়ার জন্য উত্তাপ, জল এবং মাটির প্রয়োজন।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো
৩.১ “আগে এসব কিছুই জানিতাম না।”—কোন্ বিষয়টি লেখকের কাছে অজানা ছিল ?
উত্তর: অজানা বিষয়: গাছের জীবন আছে, গাছও মানুষের মতো আহার করে, দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়—এসব বিষয় লেখকের কাছে অজানা ছিল। ক্রমশ তাদের ভালোবাসতে শিখে জগদীশচন্দ্র বসু যেন সেই সত্য আবিষ্কার
করেন। এর পাশাপাশি তাদের ভাষাও তিনি অনেকখানি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

৩.২ “ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।”—কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের মধ্যে কী লক্ষ করা যায় ?
উত্তর: উদ্দিষ্ট: জগদীশচন্দ্র বসু লিখিত ‘গাছের কথা’ গদ্যাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিটিতে ‘ইহাদের' বলতে গাছেদের কথা বলা হয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয়সমূহ: মানুষের মধ্যে যেমন ক্ষমা, দয়া, উদারতা, সহনশীলতা প্রভৃতি সদ্গুণের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়, তেমনই গাছেদের মধ্যেও লেখক এই গুণগুলি প্রত্যক্ষ করেছেন।

৩.৩ “গাছের জীবন মানুষের ছায়ামাত্র।”—লেখকের এমন উক্তি অবতারণার কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: এমন উক্তির কারণ : ‘গাছের কথা” গদ্যাংশে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। এর কারণ হল, গাছের মধ্যে তিনি এমন অনেক গুণ বা বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন, যা মানুষের স্বভাবের অনুরূপ। প্রকৃতির রাজ্যে তিনি গাছকে মানুষের মতোই আহার করতে, দিনে দিনে।বেড়ে উঠতে দেখেছেন। লেখক উপলব্ধি করেছেন যে, গাছেরও মানুষেরই মতো অভাব এবং দুঃখকষ্টের অনুভূতি রয়েছে। জীবনধারণের জন্য মানুষেরই মতো গাছকেও সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়। আবার কষ্টে পড়ে এদের কেউ কেউ নানান অসৎ উপায় অবলম্বন করে। মানুষের মধ্যে যেমন পরস্পরকে সাহায্য করার তাগিদ বা একের সঙ্গে অপরের বন্ধুত্ব দেখা যায়, তেমনই গাছেদের মধ্যেও একই জিনিস লক্ষ করা যায়। এমনকি পাছের মধ্যে স্বার্থত্যাগের মতো সুমহান মানবিক আদর্শও যে রয়েছে লেখক তা উপলব্ধি করেছেন। মানুষ মায়ের মতোই গাছ ও প্রয়োজনে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে তার সন্তান গাছকে রক্ষা করে থাকে।

৩.৪ জীবনের ধর্ম কীভাবে রচনাংশটিতে আলোচিত ও ব্যাখ্যাত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: জীবনের ধর্ম: 'গাছের কথা' গদ্যাংশে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু জীবনের স্বাভাবিক ও সাধারণ ধর্ম সম্পর্কে তাঁর মতামত প্রকাশ
করেছেন। শুকনো ডাল আর জীবিত একটি গাছের তুলনা করে লেখক জানিয়েছেন যে, জীবনের ধর্মই হল বিকাশ ও বৃদ্ধি। প্রাণের আর একটি লক্ষণ হল গতি। লতা গাছকে পাক দিয়ে জড়িয়ে ধরে—এই সহজ উদাহরণটির সাহয্যে লেখক গাছের 'গতি' বুঝিয়েছেন। প্রাণের মধ্যে যে বিকাশ ও পরিণতির ধর্ম রয়েছে তার উদাহরণ প্রসঙ্গে তিনি বীজ ও ডিমের উল্লেখ করেছেন। উপযুক্ত পরিবেশে বীজ ও ডিমের ভেতরে থাকা প্রাণ বিকশিত হয়। উত্তাপ পেলে ডিম থেকে পাখির ছানা জন্ম লাভ করে। উত্তাপ, জল ও মাটির সাহায্যে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ওঠে। একইরকমভাবে মানুষের জীবনেও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশের বিপুল ভূমিকা
রয়েছে। এভাবেই তিনি গদ্যটির মাধ্যমে জীবনের ধর্ম আলোচনা করেছেন।

৩.৫ “নানা উপায়ে গাছের বীজ ছড়াইয়া যায়।”—উপায়গুলি পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা করো।
উত্তর: বীজ ছড়ানোর উপায়: জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর 'গাছের কথা "প্রবন্ধে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
প্রাবন্ধিকের কথা অনুযায়ী, নানা উপায়ে গাছের বীজ ছড়িয়ে যায়। আমরা যত গাছপালা বা বনজঙ্গল দেখি তা সবই মানুষের ছড়ানো বীজ থেকে সৃষ্টি হয়নি। মানুষ কৃষিকাজের স্বার্থে গাছের বীজ ছড়িয়ে থাকে। এ ছাড়া পাখিরা ফল খেয়ে যেখানে-সেখানে বীজ ছড়িয়ে ফেলে, অনেকসময় দূরদেশেও বয়ে নিয়ে যায়। মানুষ বাস করে না এমন দ্বীপেও এইভাবেই গাছ জন্মায় ।
আবার অনেক বীজ বাতাসে উড়ে অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। যেমন, শিমুল ফল ফেটে বের হওয়া বীজ তুলোর সঙ্গে হাওয়ায় উড়তে উড়তে
ছড়িয়ে যায়৷ এভাবেই প্রতিদিন অনেক দূরত্ব পেরিয়ে দেশদেশান্তরে বীজ ছড়িয়ে পড়ছে।

৩.৬ লেখক তাঁর ছেলেবেলার কথা পাঠ্যাংশে কীভাবে স্মরণ করেছেন, তা আলোচনা করো।
উত্তর: শৈশবের স্মৃতি : ‘গাছের কথা' প্রবন্ধে লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। গাছের জীবন সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি নিজের ছেলেবেলার দিনগুলির কথা স্মরণ করেছেন।
প্রবন্ধের শুরুতেই তিনি জানিয়েছেন, ছেলেবেলায় একা একা মাঠে বা পাহাড়ে তিনি বেড়াতে যেতেন। তখন তিনি গাছ, পাখি ও কীটপতঙ্গকে সেভাবে চিনতে অথবা ভালোবাসতে শেখেননি। তাই সব তাঁর কেমন যেন খালি খালি লাগত। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা : তিনি যতই প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন, ততই খুঁজে পেয়েছেন অপার আনন্দের চাবিকাঠি ধীরে ধীরে গাছের নানান অনুভূতিতে সাড়া দেওয়ার বিষয়টি তাঁকে আলোড়িত করেছে। বীজ সংক্রান্ত আলোচনায় লেখক দ্বিতীয়বার তাঁর
ছেলেবেলার কথা মনে করেছেন। শিমুল ফল ফেটে হাওয়ায় তুলোর সঙ্গে বীজ উড়তে থাকলে, ছোটোবেলায় লেখক তা ধরার জন্য ছোটাছুটি করতেন। সেই তুলো-সহ বীজটিকে হাওয়া অনেক ওপরে নিয়ে যেত ফলে ধরা যেত না।

৩.৭  “ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বীজ পাকিয়া থাকে।”—উদ্ধৃতিটির সাপেক্ষে নীচের ছকটি পূরণ করো।

উত্তর:
বীজ  >    কোন্ ঋতুতে পাকে
১। আম > গ্রীষ্ম
২। লিচু > গ্রীষ্ম

৩। ধান > শরৎ-হেমন্ত
৪। যব > শরৎ-হেমন্ত
৫। কুল >  বসন্ত

৩.৮ “পৃথিবী মাতার ন্যায় তাহাকে কোলে লইলেন।”— বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে লেখকের গভীর উপলব্ধি উদ্ধৃতিটিতে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তর: বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে উপলব্ধি: 'অব্যক্ত' গ্রন্থের অন্তর্গত ‘গাছের কথা' শীর্ষক প্রবন্ধে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। আলোচ্য অংশে লেখক লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে থাকা একটি বীজ সম্পর্কে কথাটি বলেছেন। গাছের ফলের মধ্যে থাকা বীজ, মাটিতে আশ্রয় নেওয়ার পর ক্রমশ হুলোমাটির নীচে ঢাকা পড়ল। এভাবে সেটি মানুষের চোখের আড়ালে চলে গেলেও বিধাতার দৃষ্টির বাইরে যায় না। মা যেমন ধুলোমাখা সন্তানকে পরিষ্কার করে সস্নেহে কোলে তুলে নেন, তেমনই পৃথিবীও মায়ের মতো তাকে সন্তানজ্ঞানে কোলে তুলে নেন।
মৃত্তিকার মমতাভরা আচ্ছাদনে আর সুরক্ষায় বীজটি শীত ও ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পায়। ছোট্ট বীজ বড়ো হওয়ার সম্ভাবনা বুকে নিয়ে
পৃথিবী মায়ের কোলে নিরাপদে ঘুমিয়ে পড়ে। বিশ্বপ্রকৃতি যে অপূর্ব লীলা প্রতি মুহূর্তে দেখিয়ে চলেছে, লেখক তার একজন মুগ্ধ দর্শকমাত্র।
বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে লেখক তাঁর গভীর উপলব্ধি এমনভাবেই পাঠ্যাংশে ফুটিয়ে তুলেছেন।

৩ ৯ “প্রত্যেক বীজ হইতে গাছ জন্মে কি না, কেহ বলিতে পারে না।”— বীজ থেকে গাছের জন্মের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শর্তগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: গাছের জন্মের শর্তাবলি: বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর লেখা 'গাছের কথা' প্রবন্ধে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
লেখকের মতে বীজ থেকে গাছ জন্মানোর জন্য প্রধান শর্তগুলি হল—
যথাযথ উত্তাপ,জল এবং নাটি। প্রথমত, বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমের জন্য উত্তাপ বিশেষ প্রয়োজন, কারণ খুব শীতল বা খুব উন্ন পরিবেশে
বীজ অঙ্কুরিত হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, বীজ থেকে গাছ হওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন জল, যা শোষণ করেই বীজ বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, উপযুক্ত বাটিও বীজ থেকে গাছ জন্মানোর জন্য আবশ্যক। কঠিন মাটিতে বীজ জন্মায় না, কারণ কঠিন মাটি ভেদ করে বীজ থেকে শিকড় ছড়িয়ে পড়তে পারে না।

৭.১০ তখন সব খালি-খালি লাগিত।”—কখনকার অনুভূতির কথা বলা হল? কেন তখন সব খালি-খালি লাগত? ক্রমশ তা কীভাবে অন্য চেহারা পেল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: অনুভূতির কাল: 'গাছের কথা' প্রবন্ধের আলোচ্য অংশে তখন' বলতে জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর বালক বয়সের কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
অনুভূতির কারণ: অল্পবয়সে জগদীশচন্দ্র যখন একা একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে যেতেন তখন প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাই প্রকৃতির রাজ্যে সমস্ত কিছুই তাঁর খালি- খালি লাগত।
অনুভূতির বদল:- প্রকৃতি সম্পর্কে জগদীশচন্দ্রের এই অনুভূতিয়বদলে গেল, যখন থেকে তিনি গাছ, পাখি ও কীটপতঙ্গকে ভালোবাসতে শিখলেন। অত্যন্ত কাছ থেকে প্রকৃতির পাঠ নিয়ে লেখক উপলব্ধি করলেন গাছের অদম্য প্রাণশক্তিকে। উদ্ভিদের সুক্ষ্ম মানবিক অনুভূতি তাঁকে চমৎকৃত করল। জীবজগতের বৈচিত্র্য তাঁর চোখে বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে ধরা পড়ল।

৪.নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো।
৪.১ আগে যখন একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে যাইতাম, তখন সব খালি-খালি লাগিত।
(সরল বাক্যে)

উত্তর: আগে একা মাঠে-পাহাড়ে বেড়াইতে গেলে সব খালি খালি লাগিত।
৪.২ তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা পারিতাম না। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উত্তর: তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা অবোধ্য ছিল।
৪.৩ ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখ-কষ্ট দেখিতে পাই।-(জটিল বাক্যে)
উত্তর: আমাদের যেমন অভাব, দুঃখ-কষ্ট আছে, ইহাদের মধ্যেও তেমন দেখিতে পাই।
৪.৪ তোমরা শুষ্ক গাছের ডাল সকলেই দেখিয়াছ। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর: তোমাদের মধ্যে এমন কেহ নাই যে শুষ্ক গাছের ডাল দেখে নাই ।
৪.৫ প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কে বলিতে পারে ?(প্রশ্ন পরিহার করো) 
উত্তর: প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কেহই বলিতে 
পারে না। 

৫. নীচের শব্দগুলির দল নির্ণয় করো: কীটপতঙ্গ, স্বার্থত্যাগ, বৃক্ষশিশু, বনজঙ্গল, জনমানবশূন্য, দিনরাত্রি, দেশান্তরে, নিরাপদ।
.
উত্তর: কীটপতঙ্গ—কীট্ (রুদ্ধ) · প (মুক্ত) · তত্ (রুদ্ধ) · গ (মুক্ত)
স্বার্থত্যাগ—স্বার্ (রুদ্ধ) . থ (মুক্ত) · ত্যাগ (রুদ্ধ )
বৃক্ষশিশু—বৃখ্ (রুদ্ধ) · খ (মুক্ত) · শি (মুক্ত) . শু (মুক্ত)
বনজঙ্গল—–বন্ (রুদ্ধ) · জঙ্ (রুদ্ধ) · গল্ (রুদ্ধ )
জনমানবশূন্য—জ (মুক্ত) · ন (মুক্ত) · মা (মুক্ত) · নব্ (রুদ্ধ) . শুন্
(রুদ্ধ) · ন (মুক্ত)
দিনরাত্রি – দিন্ (রুদ্ধ) · রাত্ (রুদ্ধ) · রি (মুক্ত)
.
দেশান্তরে–দে (মুক্ত). শান্ (রুদ্ধ) · ত (মুক্ত) রে (মুক্ত)
নিরাপদ–নি (মুক্ত) · রা (মুক্ত) · পদ (রুদ্ধ)

৬. নিম্নরেখাঙ্কিত অংশের কারক-বিভক্তি নির্দেশ করো।
৬.১ ইহাদের মধ্যে একের সহিত অপরের বন্ধুত্ব হয়।
উত্তর: কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি ।
৬.২ আর কিছুকাল পরে ইহার চিহ্নও থাকিবে না।
উত্তর: সম্বন্ধপদ, 'র' বিভক্তি।
৬.৩ বীজ দেখিয়া গাছ কত বড়ো হইবে বলা যায়।
উত্তর: কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি।
৬.৪ মানুষের সর্বোচ্চ গুণ যে স্বার্থত্যাগ, গাছে তাহাও দেখা যায়।
উত্তর: অধিকরণ কারক, 'এ' বিভক্তি।

৭.. সন্ধির পদগুলি খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করো
৭.১ তাহার মধ্যে বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।
উত্তর: নিরাপদে = নিঃ+ আপদে।
৭.২ অতি প্রকাণ্ড বটগাছ সরিষা অপেক্ষা ছোটো বীজ হইতে জন্মে
উত্তর: অপেক্ষা = অপ + ঈক্ষা।
৭.৩ এই প্রকারে দিনরাত্রি দেশদেশান্তরে বীজ ছড়াইয়া পড়িতেছে।
উত্তর: দেশান্তরে - দেশ + অন্তরে।