পথের পাঁচালী || দ্বিতীয় পরীক্ষা প্রশ্নের উত্তর
![]() |
![]() |
দ্বিতীয় পরীক্ষা
পথের পাঁচালী
অষ্টম শ্রেণী
প্রশ্ন:- অপু কার সঙ্গে প্রথম গ্রামের বাইরে পা দিয়েছিল ?
উত্তর-অপু তার বাবা হরিহরের সঙ্গে প্রথম গ্রামের বাইরে পা দিয়েছিল।
প্রশ্ন:- হরিহর কোন্ শিষ্যর বাড়ি গিয়েছিলেন?
উত্তর-হরিহর তাঁর শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- সর্বজয়ার বলা অপুর 'উদমুষ্টি কাণ্ড' কী ছিল?
উত্তর - বনবাদাড়ের পুলস্থূলতা নিয়ে এসে বাড়ির মাঝখানে চলার পথে অপুর ‘টেলিগিরাপের' তার টাঙানো ছিল সর্বজয়ার কাছে 'উদঘুটি কান্ড'।
প্রশ্ন:- অপু কার কাছ থেকে শকুনের ডিম সপ্তাহ করে এনেছিল ?
→ অপু হিরু নাপিতের কাঠালতলায় গোরু বাঁধে যে রাখালরা তাদের একজনের কাছ থেকে চার পয়সা ও কয়েকটি কড়ির বিনিময়ে শকুনের ডিম সংগ্রহ করে এনেছিল।
প্রশ্ন:- কে কেন অপুর পায়ের আঙুলে পাথরকুচি পাতা বেটে বেঁধে দিয়েছিল ?
উত্তর- চেরা বাঁশে অপুর পা কেটে গিয়েছিল বলে অমলা অপুর পায়ে পাথরকুচি পাতা বেটে বেঁধে দিয়েছিল।
প্রশ্ন:- “তুমি বড়ো ভালো ছেলে”—কথাটি কে বলেছিল ?
উত্তর- অপুর কল্পিত রাঙা শাড়ি পরা, দেবী দুর্গার মতো হার ও বালা পরা বিশালাক্ষী দেবী এই কথাটি বলেছিলেন।
প্রশ্ন:- দুর্গা ছোটো হাঁড়িতে কী রান্না করেছিল?
উত্তর- > দুর্গা ছোটো হাঁড়িতে ভাত ও মেটে আলু রান্না করেছিল।
প্রশ্ন:- 'সব দর্শন সংগ্রহ' বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে কী লেখা ছিল?
উত্তর→ ‘সর্ব-দর্শন সংগ্রহ' বইটিতে লেখা ছিল যে পারদ শকুনের ডিমে পারদ ভরে দু-দিন রোদে দেওয়ার পর তা মুখের মধ্যে রাখলে মানুষ
উড়তে পারে।
প্রশ্ন:- “আমি এ গ্রামের বিশালাক্ষী দেবী।” তিনি কী আদেশ।করেছিলেন?
উত্তর→ বিশালাক্ষী দেবী স্বরূপ চক্রবর্তীকে আদেশ করেছিলেন চতুর্দশীর রাতে পঞ্চাননতলায় একশ আটটা কুমড়ো বলি দিয়ে কালীপুজো করতে।
প্রশ্ন:- দুর্গা কেন অপুকে দুটি পয়সা দিয়েছিল?
উত্তর→ যাত্রা দেখতে গিয়ে মুড়কি কেনা বা 'নিচু' (লিচু) খাওয়ার জন্যে দুর্গা অপুকে দুটি পয়সা দিয়েছিল।
প্রশ্ন:- নারকেল মালায় দুর্গা কী নিয়েছিল।
উত্তর→ দুর্গা নারকেল মালায় দু-পলা তেল নিয়েছিল।
প্রশ্ন:- মারের হাত থেকে দূর্গাকে কে বাঁচিয়েছিলেন?
উত্তর→ মারের হাত থেকে দুর্গাকে টুনির মা বাঁচিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- দুর্গা চড়ুইভাতির সময় কোথা থেকে মেটে আলুর ফল এনেছিল ?
উত্তর- দুর্গা পুঁটিদের তালতলায় একটা ঝোপের মাথায় ফলে থাকা মেটে আলুর ফল এনেছিল ।
প্রশ্ন:- সতু অপুর চোখে কী ছুঁড়ে মেরেছিল?
উত্তর-সতু মাকাল ফল নিয়ে পালানোর সময় অপু তাকে তাড়া করলে সে অপুর চোখে বালি ছুঁড়ে মেরেছিল।
প্রশ্ন:- নীলপূজার দিন বিকালে সন্ন্যাসীরা কী করে ?
উত্তর -নীলপূজার দিন বিকালে সন্ন্যাসীরা একটা ছোটো খেজুর গাছে কাঁটা ভাঙে।
প্রশ্ন:- “সে নগদ পয়সা ছাড়া কোনো রকমেই রাজি হয় না।” –এখানে 'সে' বলতে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর- "সে" বলতে হিরু নাপিতের কাঁঠালতলায় গোরু বেঁধে গৃহস্থের বাড়িতে তেল-তামাক আনতে যেত যে রাখালেরা, তাদের মধ্যে একজনের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন:- শূন্য মার্গে বিচরণ করার পদ্ধতি অপু কোথায় পড়েছিল ?
উত্তর→ শূন্য মার্গে বিচরণ করার পদ্ধতি অপু তার পিতার 'সর্ব-দর্শন সংগ্রহ' নামক একটি বইতে পড়েছিল।
প্রশ্ন:- বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়িতে অপু কোন্ বইটি দেখতে চাইত ?
উত্তর- বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়িতে অপু 'প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা' বইটি দেখতে চাইত।
প্রশ্ন:- কারা চড়ুইভাতি করেছিল, নামগুলি লেখো।
উত্তর→ দুর্গা, অপু ও কালীনাথ চক্কত্তির মেয়ে বিনি—এরা তিনজনে মিলে চড়ুইভাতি করেছিল।
প্রশ্ন:- “তাহাদের বাড়িতে এরকম জিনিস নাই।”—কোন্ জিনিস দেখে অপুর এ কথা মনে হয়েছিল ?
উত্তর- হরিহরের শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ির কড়ির আলনা, রংবেরঙের ঝুলন্ত শিকা, পশমের পাখি, কাচ ও মাটির পুতুল, শোলার গাছ দেখে অপুর এ কথা মনে হয়েছিল।
প্রশ্ন - “একদিন পাড়ার এক ব্রাক্ষ্মণ প্রতিবেশীর বাড়ি অপুর নিমন্ত্রণ হইল।”—সেই নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাওয়ার জন্য অপুকে কে ডাকতে এসেছিল?
উত্তর- হরিহরের শিষ্য লক্ষ্মণের এক ব্রাক্ষ্মণ প্রতিবেশীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে যাওয়ার জন্য সেই বাড়িরই একটি মেয়ে, যার নাম অমলা,
এসে অপুকে ডেকেছিল।
প্রশ্ন:- “বাড়ি আসিয়া অপু দিন পনেরো ধরিয়া নিজের অদ্ভুত ভ্রমণ কাহিনি বলিয়া বেড়াইতে লাগিল।”—তার ভ্রমণ কাহিনী 'অদ্ভুত' কেন?
উত্তর - অপু তার বাবা হরিহরের সঙ্গে প্রথমবার গ্রামের বাইরে লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে গিয়ে যেসব নতুন নতুন জিনিস দেখেছিল ও উচ্চমানের খাদ্য খেতে পেয়েছিল, তা সে নিজের এই ছোট্ট জীবনে কখনও দেখেনি, তাই এই ভ্রমণ তার কাছে ‘অদ্ভুত’ ছিল।
প্রশ্ন:- বিশালাক্ষী দেবী কোন বংশের প্রতিষ্ঠিত দেবতা? তিনি স্বপ্নে মন্দির ত্যাগের কী কারণ বলেছিলেন?
উত্তর- উদ্দিষ্ট বংশ: অপুদের বাড়ির কাছাকাছি বনের মধ্যে মজা পুকুরের পাড়ে ছিল দেবী বিশালক্ষীর মন্দির। ইনি ছিলেন গ্রামের মজুমদার
বংশের প্রতিষ্ঠিত দেবী।
> মন্দির ত্যাগের কারণ: একসময় কোনো এক বিষয়ে সফলতা পেয়ে মজুমদারেরা দেবীর মন্দিরে নরবলি দেন। এতে দেবী রেগে গিয়ে স্বপ্নে জানিয়েছিলেন যে, তিনি মন্দির ত্যাগ করে চলে যাবেন, আর কখনও ফিরবেন না। এইসব ঘটনা অনেককাল আগের।
প্রশ্ন:- “গ্রামে অল্প দিনে ওলাওঠার মড়ক আরম্ভ হবে'- এই মড়ক থামাতে সে কী ব্যবস্থা নিতে বলেছিল ?
উত্তর- বক্তা: নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বরূপ চক্রবর্তীর সামনে সুন্দরী মেয়ের রূপে উপস্থিত হয়ে গ্রামের বিশালাক্ষী দেবী এ কথা 'বলেছিলেন।
→ গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা: ষোড়শী বালিকার রূপ ধরে বিশালাক্ষী দেবী স্বরূপ চক্রবর্তীকে জানান যে চতুর্দশীর রাত্রে পঞ্চাননতলায় একশো আটটি কুমড়ো বলি দিয়ে কালীপুজো করলেই একমাত্র ওলাওঠার মড়কের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন:-“পুরাদমে বেচাকেনা আরম্ভ হইয়া গেল।”—কোন দোকানে কী বেচাকেনার কথা বলা হয়েছে? প্রথমে কে পান কিনেছিল?
উত্তর- বেচাকেনার বস্তু: একদিন খেলার ছলে দুর্গা ও অপু ইট সাজিয়ে একটি দোকানঘর বানিয়েছিল। সেই দোকানঘর বনজঙ্গল থেকে
সংগৃহীত বিভিন্ন ফল, ফুল, লতা-পাতা দিয়ে সাজানোর পর, দোকানে পুরোদমে কেনাবেচা আরম্ভ হয়। দুর্গা দোকান থেকে পুতুলের বিয়ের
জন্য নকল সরু চাল কেনে। এইরকম নানাবিধ জিনিস কেনাবেচার মাধ্যমেই খেলা জমে ওঠে।
→ প্রথম ক্রেতা: দুর্গাই তাদের খেলার ছলে বানানো দোকানঘর থেকে প্রথম খরিদ্দার হিসেবে পান কেনে।
প্রশ্ন:- “তাহার বাবা বলিল—ওই দেখো খোকা রেলের রাস্তা।” কার বাবার কথা বলা হয়েছে? রেলের রাস্তা দেখে খোকা কী বলেছিল ?
উত্তর-> উল্লিখিত প্রশ্নে 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থের প্রধান চরিত্র অপুর বাবা হরিহরের কথা বলা হয়েছে।
খোকার প্রতিক্রিয়া: রেলের রাস্তা দেখে খোকা অর্থাৎ অপু খুবই বিস্মিত হয়েছিল ও মজা পেয়েছিল। বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মনে এক আনন্দ-মিশ্রিত অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল। তার কেবলই মনে হচ্ছিল যে, রেলের রাস্তা কেমন সহজভাবে তার সামনে এসে পড়েছে। রেলের রাস্তা দেখে তার মনে জাগে নানান প্রশ্ন। তার শিশুমনে রেলগাড়ি দেখার সাধও জাগে। কিন্তু রেলগাড়ি দু-ঘণ্টা পরে আসবে বলে, সেই যাত্রায় তার আর রেলগাড়ি দেখা হয়ে ওঠে না।
প্রশ্ন:- অপু তার বাবার শিষ্যের বাড়িতে বধূটির ঘরে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর -;আপু তার বাবার শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল। সেখানে তার ছোটোভাইয়ের বধূর ঘরে সে নিমন্ত্রণ খেতে যায়। খেতে বাসে খাবারের জিনিসপত্র ও আয়োজনের ঘটা দেখে অপু অবাক হয়ে যায়। একটা রেকাবিতে আলাদা করে নুন, লেবু দেওয়া ছিল। প্রতিটা তরকারির জন্য ছিল আলাদা আলাদা বাটি। এ ছাড়াও ছিল তার ও তার দিদির প্রিয় খাদ্য লুচি। শুধু তারই জন্য ছিল একটা বড়ো গলদাচিংড়ির মাথা। বাড়িতে অনেকদিন তাদের সকাল-বিকেল জলখাবার না খেয়ে কেটে যায়। ভালো খাবার এতদিন অপুর স্বপ্নেই ছিল কেবল। তাই খাবারের আয়োজন দেখে অপু খুবই অবাক হয়ে যায় ।
প্রশ্ন:- আজ যেন একটি উৎসবের দিন।”—কখন, কেন দুর্গার এরূপ মনে হয়েছিল ?
উত্তর- আলোচ্য অংশের কাহিনি থেকে জানা যায়, দুর্গাপুজোর আর মাত্র বাইশ দিন বাকি ছিল। দুর্গা মনে মনে হিসেব করে রেখেছিল যে, তার
বাবা বাড়ি ফিরবেন ওই কটা দিন পরেই। এ কথা ভেবেই তার মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। তার মনে হয়েছিল, বাবা অপু, মা ও তার জন্য পুতুল, কাপড় ও আলতা, আনবেন। এ ছাড়াও সেদিন রাতে তাদের বাড়িতে রান্নার আয়োজন হয়েছিল। সাধারণত তাদের বাড়িতে রাতে রান্না হয় না। সকালের বাসি ভাত তরকারি দিয়েই তারা রাতের খাওয়া সেরে নেয়। তাই সেই রাত্রে রান্নার আয়োজন ও কয়েকদিন পর বাবার বাড়ি ফেরার আনন্দ মিলেমিশে দিনটি দুর্গার কাছে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্ন:- “দশ-বারো দিন সন্ন্যাসী-নাচনের পর চড়কের পূর্বরাত্রে নীলপূজা আসিল।”—সন্ন্যাসী নাচন কী? নীলপূজার দিন বিকেলে দুর্গা ও অপু কী করেছিল?
উত্তর-- সন্ন্যাসী নাচন: চড়কপূজার সময় সন্ন্যাসীর দল বাড়ি বাড়ি নাচগান করে। গৃহস্থ বাড়ি থেকে সন্ন্যাসীদের পুরোনো কাপড়, চাল পয়সা বা ঘড়া দেওয়া হয়। এই প্রথাকে সন্ন্যাসী-নাচন বলে।
দুর্গা ও অপুর কর্মকাণ্ড: নীলপূজার দিন বিকেলে দুর্গা ও অপু নদীর ধারে সন্ন্যাসীদের কাঁটাভাঙা দেখতে গিয়েছিল। সেখানে ভুবন মুখুজ্যেদের বাড়ির মেয়েদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছিল। টুনু বলেছিল, সেদিন রাতে সন্ন্যাসীরা শ্মশান জাগাতে যাবে। দুর্গা সন্ন্যাসীদের মড়ার মুন্ডু নিয়ে আসার ছড়া শুনিয়েছিল। রানু বলেছিল যে, সেদিন রাতটা ভালো নয় তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাওয়াই
উচিত কাজ হবে। দুর্গা রানুদের সঙ্গে চলে গেলেও অপু গেল না। তারপর প্রচন্ড মেঘ করে এলে অপু ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরে আসছিল। পথে নেড়ার ঠাকুমার সঙ্গে তার দেখা হয়। অপুর মনে হয়, তার চারিদিকে কটু গন্ধে ভরে গিয়েছে। অবশেষে নেড়ার ঠাকুমা তাকে বাড়ির পথে এগিয়ে দিয়ে যায়।
প্রশ্ন:-“সন্ধ্যার পর সর্বজয়া ভাত চড়াইয়াছিল”—দ্বাদশ পরিচ্ছেদে অপুদের বাড়ির যে বর্ণনা আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী'-র দ্বাদশ পরিচ্ছেদে রাতের বেলায় অপুদের বাড়ির ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সর্বজয়া ভাত রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অপু দাওয়াতে মাদুর পেতে বসেছিল। চারিদিক অন্ধকার, ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল।
দুর্গা বঁটি পেতে তরকারি কাটছিল। তাদের বাবা বাড়িতে আসবে বলে অন্যান্য দিনের প্রথা ভেঙে সেদিন ঘরে রাতে টাটকা রান্না হচ্ছিল।
প্রশ্ন:-“এরা খুব বড়োলোক তো”–কার, কেন এমন মনে হয়েছিল ?
উত্তর- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি অপুর মনে হয়েছিল।
মনে হওয়ার কারণ: পিতা হরিহরের সঙ্গে তাঁর শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে অপু তাদের ঘরের বহুবিধ সামগ্রী।দেখেছিল। এসব সামগ্রী যেমন কড়ির আলনা, রঙিন ঝুলন্ত শিকা, পশমের পাখি, কাচের পুতুল, মাটির পুতুল, শোলার গাছ ইত্যাদি দেখে অপুর মনে হয়েছিল যে, তারা বেশ বড়োলোক।
প্রশ্ন:- “আমি জানি ওদের ছড়া”–ছড়াটি উল্লেখ করো।
উত্তর- দুর্গা অপুকে নীলপূজায় গাজনের সন্ন্যাসীদের যে ছড়া শুনিয়েছিল, সেটি হল-“সগো থেকে এল রথ নামল খেতুতলে চব্বিশ কুটি বাণবর্ষা শিবের সঙ্গে চলে—
সত্যযুগের মড়া আওল যুগের মাটি
শিব শিব বল রে ভাই ঢাকে দ্যাও কাঠি — "
প্রশ্ন:- “বাঁকা কঞ্চি অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস।”—সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার উপকারিতা সম্পর্কে লেখো।
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে অপুর ছেলেবেলা থেকে শুরু করে কৈশোরকাল পর্যন্ত ছবি তুলে ধরা হয়েছে। গ্রাম্য গরিব পরিবারের সন্তান অপুর ছোটবেলা কেটেছে সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলা করে। যে-কোনো শিশুর কাছেই দামি ও সহজে পাওয়া যায় না, এমন জিনিসের চেয়ে সামান্য ও সহজে মেলে জিনিস নিয়ে খেলার উপকারিতা বেশি। এতে জীবনে প্রাপ্তির মূল্য বুঝতে শেখে সে। অপব্যয় ও অপচয় সম্পর্কে তার ধারণা জন্মায়। এতে তার কল্পানাশক্তি বৃদ্ধি পায়, অল্পে খুশি হয়ে জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে শেখে সে।
প্রশ্ন:-“সে শুষ্ক মুখে উদাস নয়নে ও পাড়ার পথে রায়েদের বাগানে পড়ন্ত আমগাছের গুঁড়ির উপর বসিয়াছিল।”—'সে' কে? সে কেন এভাবে বসেছিল—তা তোমার পাঠ্য রচনা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: উদ্ধৃত অংশে 'সে' বলতে অপুর কথা বলা হয়েছে।
> উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বসে থাকার কারণ: অপু তার বাবার শিষ্যবাড়ি যাওয়ার সময় রেলরাস্তা, টেলিগ্রাফের তার ইত্যাদি দেখেছিল শিশুমনের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সে নিজের বাড়ির উঠোনে অনেক পরিশ্রম করে নকল টেলিগ্রাফের তার টাঙিয়েছিল। কিন্তু সেই তার দেখতে না পেয়ে সর্বজয়া তা ছিঁড়ে ফেলে। তাতে অপুর মায়ের ওপর গভীর অভিমান হয়। সে মাকে সেই তার টাঙানোর পরিশ্রমের ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করেও যখন বিফল হয়, তখন রায়েদের বাগানে আমগাছের গুঁড়ির ওপর গিয়ে শুকনো মুখে, উদাস চোখে বসে থাকে।
প্রশ্ন:- “দূর, তুই একটা পাগল।”-কে, কাকে একথা বলেছে? বক্তা কেন তাকে পাগল বলেছে?
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে দুর্গা তার ভাই অপুকে পাগল বলেছে।
'পাগল' বলার কারণ: অপু জন্মানোর পর থেকে কখনও দূরে কোথাও যায়নি। নদীর ওপারের খড়ের মাঠে বাবলা গাছে ফুটে থাকা হলুদ ফুল, গোরু চরার দৃশ্য, মোটা গুলগুলতা দুলানো শিমুল গাছটাও তার কাছে ছিল অনেক দূর। রাখালরা নদীর ধারে গোরুকে জল খাওয়ানো, ছোটো জেলে ডিঙি বেয়ে অঙ্কুর মাঝির মাছ ধরার দোয়াড়ি পাততে যাওয়া, সোঁদালি ফুলের হাওয়ায় দুলতে থাকা- এসব সে দেখত, কিন্তু শব্দের অভাবে প্রকাশ করতে পারত না। শুধু তার দিদিকে সে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলত “ওই যে? ওই গাছটার পিছনে? কেমন অনেক দূর না?” এতে দুর্গা হাসতে হাসতে তাকে 'পাগল' বলে সম্বোধন করত।
প্রশ্ন:- “বড়ো সুন্দর বনভোজনের স্থানটি ”বনভোজনে কারা কারা উপস্থিত ছিল? বনভোজনের স্থানটির বিবরণ দাও। সেই বনভোজনে যাওয়ার উপকরণ কী ছিল ?
উত্তর:- উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ: বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে বনভোজনে উপস্থিত ছিল অপু, দুর্গা ও কালীনাথ চক্রবর্তীর মেয়ে বিনি।
স্থানের বিবরণ: নীলমণি রায়ের ভিটার কিছুটা অংশ পরিষ্কার করে বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। বনভোজনের স্থানটি ছিল খুব সুন্দর। চারদিকে বনঝোপ, তেলাকুচো লতা দুলছিল, বেলগাছের নীচে ছিল শেওড়াগাছের ফুলের ঝাড়। আধপোড়া কয়েকটা দুর্বাঘাসের উপর খঞ্জনী পাখিরা নাচছিল। প্রথম বসন্তের দিনে ঝোপে ঝোপে কচিপাতা, ঘেঁটুফুলের ঝাড়, বাতাবিলেবু গাছে ফুটে থাকা সাদা সাদা ফুল স্থানটির সৌন্দর্যকে অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল।
খাবারের উপকরণ: অপু-দুর্গাদের বনভোজনের খাওয়ার উপকরণের মধ্যে ছিল ভাত, করা মেটে আলুর ফল সেদ্ধ, ও পানসে আধপোড়া
বেগুনভাজা । এই উপকরণে লবণের কোনো বালাই ছিল না।
প্রশ্ন:- আমি এ গ্রামের বিশালাক্ষী দেবী।”কার সঙ্গে, কীভাবে দেবীর সাক্ষাৎ হয়েছিল ? বিশালাক্ষী দেবী তাকে কী ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিল? বিশালাক্ষী দেবী কেন মন্দির পরিত্যাগ করেছিলেন?
উত্তর - নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বরূপ চক্রবর্ত্তী ভিন গাঁ থেকে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফিরছিলেন। সন্ধ্যার সময়ে নদীর ঘাটে নামার পথের পাশে একজন সুন্দরী ষোড়শী মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি। এভাবেই তাঁর সঙ্গে বিশালাক্ষী দেবীর সাক্ষাৎ হয়েছিল।
দেবীর ভবিষ্যদ্বাণী: বিশালাক্ষী দেবী স্বরূপ চক্রবর্ত্তীকে ঈষৎ গর্বমিশ্রিত স্বরে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন যে, গ্রামে অল্পদিনের মধ্যেই ওলাওঠার মড়ক শুরু হবে। তিনি স্বরূপ চক্রবর্ত্তীকে এই কথা সকলকে বলতে আদেশ দেন যে, চতুর্দশীর রাতে পঞ্চানন্দতলায় একশো আটটা কুমড়ো বলি দিয়ে কালীপুজো করা হয়। এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে সত্যিই গ্রামে মড়ক
দেখা দিয়েছিল।
দেবীর মন্দির পরিত্যাগের কারণ: এক সময় বিশালাক্ষী দেবী ছিলেন গ্রামের মজুমদার বংশের প্রতিষ্ঠিত দেবতা। কোনো-এক সময়ে কোনো
কাজে সাফল্য পেয়ে মজুমদারেরা মন্দিরে নরবলি দিয়েছিল। তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে দেবী স্বপ্নে জানিয়ে যান যে তিনি মন্দির পরিত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন,
আর ফিরবেন না।
প্রশ্ন:- শেষপর্যন্ত অপুর রেলরাস্তা দেখার চেষ্টার অভিজ্ঞতা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর ; অপু জীবনে প্রথমবার বাবার সঙ্গে গ্রামের বাইরে বেরিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। বাবার শিষ্যবাড়ি যাওয়ার পথে বাবাকে জিজ্ঞেস করে সে জানতে পারে যে তারা রেললাইন পেরিয়েই যাবে। তখন অপুর দিদির সঙ্গে রেলরাস্তা দেখতে যাওয়ার পুরোনো অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে। সেবার তারা অনেক কষ্ট করেও রেললাইন দেখতে পায়নি উপরন্তু রাস্তাও হারিয়ে ফেলেছিল। সে ভাবে আজ এমনই সহজে সে রেলরাস্তা দেখতে পারবে। তার জন্য ছুটতে হবে না, পথ হারাতে হবে না, বকুনি খেতে হবে না। কিছুটা গিয়েই সে দেখতে পায় একটা উঁচু রাস্তা মাঠের মাঝখান চিরে ডাইনে বাঁয়ে বহুদূর গিয়েছে। লাল খোয়ার রাশি উঁচু হয়ে ধারের দিকে সারি দিয়ে রয়েছে। সাদা সাদা লোহার খুঁটির উপর যেন একসঙ্গে অনেক দড়ির টানা বাঁধা। যতদূর দেখা যায়, ততদুর ওই সাদা খুঁটি ও লোহার টানা বাঁধা চোখে পড়ছে। বাবা হরিহর অপুকে এই রাস্তা দেখিয়ে বলেন যে এটিই হচ্ছে রেলের রাস্তা। রেলগাড়ি দেখার ইচ্ছে থাকলেও তা দু-ঘণ্টা পর আসবে বলে অপুর আর রেলগাড়ি দেখা হয় না। তাই সে বাবার থেকে রেলগাড়ি সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনে নেয়। ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে এই অভিজ্ঞতা সে বহুদিন ধরে অনেকের কাছে গল্প করেছিল।

