বিজ্ঞান ও কুসংস্কার || প্রবন্ধ রচনা / biggan o kusanskar || Rachana - school book solver

Monday, 9 June 2025

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার || প্রবন্ধ রচনা / biggan o kusanskar || Rachana

 


বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

রচনা

প্রবন্ধ রচনা

সংকেত সুত্র : ভূমিকা বিজ্ঞান কাকে বলে মানুষের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার ইতিহাস-কুসংস্কার এবং অন্ধ বিশ্বাস ভারতের অন্ধ বিশ্বাস কুসংস্কারের ভবিষ্যৎ- উপসংহার।


ভূমিকা- আমরা একটি বিতর্কিত বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন রচনা করতে চলেছি। এই ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, মানুষ একদিকে প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞান মনোভাবের অধিকারী হয়ে উঠেছে। সমাজের বুকে জমে থাকা অন্যায়
অত্যাচারকে দূরীভূত করার চেষ্টা করেছে, পৃথিবীর সর্বত্র সাম্যবাদ এবং সমাজতন্ত্রবাদের জয় পতাকা উড্ডীন করেছে; আবার অপরদিকে সেই মানুষ আজও মধ্যযুগীয় বর্বরতা আর শোষণ এবং নানা ধরনের অন্যায় আচরণকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।

একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবনীয় উন্নতি আমাদের মুগ্ধ এবং বিস্মিত করে দেয়। আজ মোটামুটি আমরা মহাপৃথিবীর প্রায় সমস্ত রহস্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচিত করতে পেরেছি এবং দৃপ্ত চিত্তে মহাকাশের বুকে একটির পর একটি অভিযান সংঘটিত করতে পেরেছি। বেশ কিছু মারাত্মক ব্যাধিকে মানুষ জয় করতে পেরেছে। জীবন আগের থেকে আরো বেশি সচ্ছন্ন ও সুনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। এরই পাশাপাশি কুসংস্কারের একটি ধারা অন্তঃসলিলা ফলগুর মত বহমান। খবরের কাগজের পাতায় চোখ মেলে দিলে এমন কিছু শিহরিত ঘটনা আমরা শুনতে পাই যা আমাদের চিত্তকে বিকল এবং মানসিকতাকে ক্লীব করে তোলে। আজও ধর্মের নামে হানাহানি চলেছে। শুধু মাত্র নীচু জাতে জন্ম হওয়ার অপরাধে কিছু মানুষকে জীবন ও
জীবিকার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা হতে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। কুসংস্কারকে হাতিয়ার করে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ অন্যায়ভাবে অন্য শ্রেণীর মানুষকে তীব্রভাবে শোষণ করছেন এবং আলস্য ও ব্যভিচারের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছেন। তাই আমাদের মনের মধ্যে এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে বিজ্ঞান ও কুসংস্কার কোনও না কোনো সম্পর্কে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত । কিভাবে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল এরই পাশাপাশি আর একটি জ্বলন্ত এবং সংবেদনশীল প্রশ্নের মীমাংসা আমাদের করতে হবে, তা হল, বৈজ্ঞানিক অভীপ্সার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কিভাবে এবং কী পরিমাণে কুসংস্কারের অপমৃত্যু ঘটে। তাহলে কি ভবিষ্যতে এমন কোনও দিন আসতে পারে যখন পৃথিবীর মানুষ সত্যি সত্যি বিজ্ঞানসম্মত চেতনা ধারায় উদ্বুদ্ধ হবে এবং কুসংস্কারকে সমাজ থেকে দূরীভূত করতে পারবে।

বিজ্ঞান কাকে বলে ?
বিজ্ঞান শব্দটির সঠিক অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। তবে পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিকেরা বিজ্ঞানের নানা ধরনের সংজ্ঞা নিরূপণ করেছেন। বারটন রাসেল বলে থাকেন বিজ্ঞান হল এমন একটি বিষয় যা মানুষের বৌদ্ধিক শক্তির উন্নতি ঘটায় এবং যে সমস্ত চেতনা বা ধারণাগুলি মনুষ্যেতর প্রাণীর অনায়ত্ত, সেগুলিকে আয়ত্তাধীন করে দেয়। বিখ্যাত দার্শনিক ডাক্তার সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ আবার বিজ্ঞানের মধ্যে দার্শনিক অভিচিন্তার পরিস্ফুটন দেখেছেন। তিনি বলেছেন, বিজ্ঞান হল দর্শনের ব্যবহারিক রূপ।
বিজ্ঞানকে আমরা একটি সুচিন্তিত চিন্তা ধারার সার্থক পরিণতি হিসাবে চিন্তা করতে পারি, বিজ্ঞান মানুষকে চিন্তাশীল এবং নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী করে তোলে। পৃথিবীর বুকে সভ্যতার অগ্রগতির সাথে বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়ে আছে। যেদিন থেকে বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল তখন থেকেই মানুষ নানাবিধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠভাবে যুক্তি-তর্ক সহকারে লড়াই করার মতো অস্ত্রের সন্ধান পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ এমারসনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। এমারসন বলেছেন— Science surpasses the old miracles of mythology. অর্থাৎ বিজ্ঞান প্রাচীন পুরাণের অলৌকিক ঘটনাগুলিকেও অতিক্রম করে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে যেসমস্ত পুরাণ মানব-মনীষকে নানা-
ভাবে আচ্ছন্ন করেছিল, মানুষের স্বাধীন চিন্তাধারাকে বারে বারে ব্যাহত করেছিল, তার
বিরুদ্ধেও বিজ্ঞান জেহাদ ঘোষণা করেছে।

বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার ইতিহাস:-  যেদিন প্রথম পাথরে পাথরে আঘাত লাগিয়ে মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিল সেদিন থেকেই বোধহয় তার বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সূত্রপাত। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই মানুষ প্রকৃতির নানা রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করেছে। তখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক অভিশাপের বিরুদ্ধে মানুষকে অসহায় মনে হত। মানুষের হাতে তখন কোনও অস্ত্র ছিল না। একটির পর একটি মারণ রোগে মানুষকে অসহায়ভাবে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। তবুও অবাধ্য প্রকৃতিকে কী করে বশ্যতা স্বীকার করানো যেতে পারে তা নিয়ে মানুষের মনে ভাবনা-চিন্তার অন্ত ছিল না।
আমরা পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদের সুক্তি অথবা পবিত্র খ্রীষ্টান গ্রন্থ বাইবেলের কবিতায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের আভাস পেয়ে থাকি। এর পাশাপাশি আমরা কখনো পদার্থবিদ্যা তত্ত্বের উন্মোচন দেখতে পাই। এর থেকে এই সূত্রটি প্রমাণিত হয় যে তখন থেকেই মানুষের মনের মধ্যে বিজ্ঞান অভিচেতনার জন্ম হয়েছিল, যদিও মানুষ তখনো পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে একটি সুসম্মত পথে নিয়ে যেতে পারেনি।
রেনেসাঁস বা নবযুগের প্রবর্তন থেকেই মানুষ বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জগতে নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়। বাস্তব জগতের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং আরামকে মুঠো বন্দী করার জন্য মানুষের বৈজ্ঞানিক প্রয়াস শুরু হয়েছিল। একটির পর একটি আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ তখন বিজ্ঞানকে আরো কাছের এবং নিজের করে পেতে চেয়েছিল। এই পর্বে আমরা পেয়েছিলাম অত্যন্ত দ্রুতগামী যন্ত্রচালিত যান থেকে বৈদ্যুতিক আলো এবং জীবনকে উন্নত করার জন্যে নানা ব্যবস্থাবলী। তবে বিজ্ঞান যে শুধু মানুষের বাহ্যিক জগতের পরিবর্তন সাধন করেছে, এমনটি ভাবলে ভুল ভাবা হবে। এরই পাশাপাশি বিজ্ঞান মানুষের মনোজগতের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে।
মানুষ ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে যুক্তি এবং তর্কের দিকে ক্রমশ এগিয়ে গেছে। নতুন একটি মূল্যবোধ এবং নতুন একধরনের বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। যা কিছু প্রাচীন, যার অন্তরালে আমরা ধার্মিক মূল্যবোধ জোর করে চাপিয়ে দিয়েছি। এতদিন তাদের অভ্রান্ত হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল। এখন মানুষ মুক্ত এবং নির্মোহ মনে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছে। মানুষ ভাবতে শিখেছে কোনও একটি ঘটনাকে আমরা কিভাবে বিশ্লেষণ করব। মানুষের মন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠেছে। কবি টেনিসন তাই বলেছেন—
There lives many faith in honest doubt. অর্থাৎ একটি সুন্দর এবং সুনিয়ন্ত্রিত সন্দেহের মধ্যে অনেকগুলি বিশ্বাসের অবতারণা হতে পারে। এটি আধুনিক যুক্তিনিষ্ঠ এবং বাস্তবতান্ত্রিক মনোভাবের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ।

কুসংস্কারও অন্ধ বিশ্বাস-  এটি অত্যন্ত আশ্চর্যের কথা যে বৈজ্ঞানিক অভিচেতনার পাশাপাশি অন্ধ-বিশ্বাস মানুষকে নানাভাবে বিপর্যস্ত করেছে। একদিকে মানুষ যখন বিজ্ঞানের হাতে ধরে উন্নতির সোনালী সরণীতে পা রাখার চেষ্টা করেছে, পাশাপাশি ঐ জাতীয় অন্ধবিশ্বাস তাকে আবার মধ্যযুগীয় বর্বরতা অথবা প্রাচীন সভ্যতার আদিম অন্ধকারে ঠেলে দেবার চেষ্টা করেছে। তাই বৈজ্ঞানিক জয়যাত্রার পাশাপাশি দেখা গেছে, কিছু মহিলাকে ডাইনি বলে হত্যা করা হচ্ছে। এর সাথে সতীদাহ, সহমরণ প্রভৃতি ভয়ঙ্কর প্রথা সমাজের বুকে চালু কুসংস্কার এবং অন্ধ বিশ্বাস আছে। পরকে খুশি করার জন্য অসহায় শিশুদের বলি দেওয়া হচ্ছে। মাদুলি, তাবিজ, কবচের মাধ্যমে ভাগ্যকে জয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু যে মধ্যযুগে এমন বর্বরতা ছিল তা নয়, একবিংশ শতাব্দীতেও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থেকে সব কিছুর অন্তরালে ভাগ্যের কারসাজি আছে বলে মনে করছেন। এখনো নানা ধরনের অন্ধ কুসংস্কার আমাদের মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অনেক সুশিক্ষিত মানুষকেও দেখা যায় তারা দৈনন্দিন জীবনে এই অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলিকে। পালন করে আসছেন। সুশিক্ষিত মানুষ খাওয়ার টেবিলে তেরো জনে বসেন না। একটি সিগারেট কাঠিতে পর পর তিনটি সিগারেট ধরান না। আয়না ভাঙলে বা মইয়ের নীচ দিয়ে হাঁটলে সময় খারাপ যাবে, এই বিশ্বাস এখনো অনেকে পোষণ করেন। রাস্তা দিয়ে কালো বেড়াল চলে গেলে যে কোনও মানুষ থমকে যান।
একদিকে যখন আমরা মহাশূন্যে রহস্য উন্মোচনে সচেষ্ট হয়েছি এবং মঙ্গল ছাড়িয়ে শুক্রের দিকে আমাদের মহাকাশযান নিরন্তর পাড়ি দিচ্ছে, অন্যদিকে এখনো আমরা এইসব বর্বরতা এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারিনি। ব্যাপারটি ভাবতে গেলে অবাক লাগে। মানুষের অসহায়তা বারে বারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে একথা সত্য, এমন কিছু দিক এখনো আছে যেখানে বিজ্ঞান উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এই সমস্ত আবছা কুয়াশাচ্ছন্ন দিকগুলিকে ঘিরে এখনো আমাদের মনের মধ্যে নানা প্রশ্নের উতরোল দেখা যায়। এই শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান প্রতিভা অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন— ভয় এবং আশার এই অবর্ণিত উৎস থেকেই অযৌক্তিক কুসংস্কারের সৃষ্টি।
যদি সত্যি সত্যি কোনও দিন বিজ্ঞান মানুষকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বজয়ী করে তোলে, যদি সমস্ত রহস্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচিত হয়, সেদিন বোধহয় আমরা আর অন্ধকার অবিশ্বাসের কাছে এইভাবে আত্মসমর্পণ করব না।

ভারতের অন্ধবিশ্বাস:-  ভারত হল তৃতীয় বিশ্বের দেশ তথাকথিত প্রথম বিশ্বের মানুষেরা এইসব দেশের উদ্দেশ্যে এক ধরনের অদ্ভুত মনোভাব পোষণ করে থাকেন। এখনো অনেক বিদেশি পর্যটকের চোখে ভারত হল ডাইনি এবং মায়াবিনীর দেশ। এখানে নাকি নরমাংস ভোজন করা হয়। অমাবস্যাতে শিশু বলি দেওয়া হয়। যদিও ভারতের অবস্থা অতটা শোচনীয় নয়।
একথা স্বীকার করতে গেলে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায় যে এখনো এখানে স্বামীর চিতায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হয়। এই প্রসঙ্গে আমরা রূপ কানোয়ারের কথা বলতে পারি ।
১৯৯৫ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর একটি অবৈজ্ঞানিক ঘটনাতে হাজার হাজার ভারতবাসী মেতে উঠেছিলেন। ঘটনাটি ছিল গণেশ মূর্তির দুধপান। পাথর বা পোড়া মাটির গণেশের সামনে চামচে করে দুধ ধরলে তা মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। অনেকে একে অলৌকিক বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা
প্রমাণ করলেন যে এই ঘটনার অন্তরালে যে সত্যটি লুকিয়ে আছে তা হল পৃষ্ঠটান।
তাই আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ভারত যেখানে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় অত্যন্ত উন্নত হয়ে উঠেছে,পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলির সঙ্গে লড়াই করে নিজস্ব অস্তিত্ব প্রমাণ  করেছেন, তাহলে কেন আমরা এই জাতীয় অলৌকিকতাকে বিশ্বাস করব।

এরই পাশাপাশি সামাজিক প্রতিপন্ন সম্পন্ন ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কথাও বলা উচিত। তাঁরা আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্যে ভারতীয় জনগণকে নানাভাবে প্রভাবিত এবং বিভ্রান্ত করে থাকেন, ধর্মগুরুরা মনে করে থাকেন এই জাতীয় অলৌকিক বিভূতি প্রকাশ করতে না পারলে তাঁরা কিছুতেই এইসব অসহায় মানুষদের অধিকার করতে পারবেন না এবং নিজেরা ঈশ্বরের প্রতিভূ হিসাবে সেবা ও পূজা পাওয়ার যোগ্য হবেন না । অথচ, প্রকৃত ধর্ম কখনোই সেকথা বলে না। ধর্ম শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হল, যা ধারণ করে। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই ধর্মকে একটি স্বাভাবিক সহজ সুন্দর বহিঃপ্রকাশ হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত। আমাদের দুর্ভাগ্য এদেশের ধার্মিক চিন্তা-ভাবনা কিছু অন্ধ কুসংস্কারে আবদ্ধ। বৈজ্ঞানিক চিন্তার সঙ্গে ধার্মিক উম্মিলনের মেলবন্ধন কাটিয়ে আমরা এখনো পর্যন্ত নির্মোহ আধ্যাত্মিকতাবাদের জন্ম দিতে পারি নি। আগামী দিনে পারব কিনা। সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

কুসংস্কারে ভবিষ্যৎ - সঠিক অর্থে কুসংস্কার বলতে সেই জাতীয় অর্থহীন বাধা-নিষেধকে বোঝানো হয়ে থাকে। যা মানুষের কোনও শুভ বুদ্ধি জাগ্রত করে না, বরং কিছু অনাচার করে থাকে। বিজ্ঞানকে আমরা সম্পূর্ণভাবে কুসংস্কারমুক্ত বলতে পারি না। কেননা আশীর্বাদের পাশাপাশি বিজ্ঞান আজ এমন কিছু অভিশাপ বহন করেছে যার ফল হয়েছে অত্যন্ত মারাত্মক।
বিজ্ঞান মানুষের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দিয়েছে। সেই অস্ত্র নির্বিচারে প্রয়োগ করা হচ্ছে অসহায় দেশের নরনারীর ওপর। সাম্প্রতিককালে সংঘটিত মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় যুদ্ধে এই ঘটনাটি ঘটতে দেখা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সমরসঙ্গী ব্রিটেন লক্ষ লক্ষ ইরাকিদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক বোমা প্রয়োগ করেছে। এটিকেও আমরা বিজ্ঞানের এক কুসংস্কার নামে চিহ্নিত করতে পারি।
এখনো পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে বর্ণবৈষম্যকে একেবারে দূরীভূত করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র গায়ের রঙ কালো হওয়ার জন্যে হাজার হাজার মানুষকে মনুষ্যত্বের সাধারণ সুযোগ-সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হয়।

উপসংহার- এই ভাবেই একবিংশ শতাব্দীর মানুষ এগিয়ে চলেছেন। তার একহাতে বিজ্ঞানের পরশ পাথর, অন্যদিকে কুসংস্কারে বোঝা। পথ চলতে চলতে মানুষ হয়তো ক্লান্ত রিক্ত হয়ে উঠাচ্ছেন। কোন পথে সঠিক সাফল্য মিলতে পারে এবং কোন্ পথ দিয়ে এগিয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত আমরা আত্মোপলব্ধি করতে পারব, সেকথা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে একথা অনস্বীকার্য যে হাজার হাজার বিজ্ঞান তাপসের অতন্দ্র রাত্রিবাহিত পরিশ্রম এবং গবেষণার ফলে মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি কুসংস্কারবিহীন হয়ে উঠেছে।
নারীজাগরণের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে নানাবিষয়ে এই কুসংস্কারবিহীন মনোভাবের পরিচয় প্রকাশ পাচ্ছে। অতএব আমরা অনায়াসে আশা করতে পারি যে আগামী পৃথিবীতে কুসংস্কার একেবারে অন্তর্হিত হয়ে যাবে। তখন সর্বত্র বিজ্ঞানের বিজয়
পতাকা উড্ডীন হবে। তখন আর কোনও শিশুকে দেবতার কাছে বলি দেওয়া হবে না অথবা কোনও নারীকে অসহায় অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যেতে বাধ্য করা হবে না। আমরা সেই স্বপ্নরঞ্জিত সোনালী দিনটির প্রতীক্ষাতেই বর্তমান অতিবাহিত করছি।