বোঝাপড়া || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || BOJHAPORA || class 8 bangla || question answer
অষ্টম শ্রেণির
বোঝাপড়া (কবিতা)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবি পরিচিতি। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতার নাম সারদা দেবী। বিদ্যালয়ের বাঁধাধরা শিক্ষার প্রতি রবীন্দ্রনাথ কোনোদিনই আকর্ষণ বোধ করেননি। গৃহশিক্ষকদের কাছে ছোটোবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষালাভ করেছেন।
ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত 'ভারতী' ও 'বালক' পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তাঁর লেখা 'কথা ও কাহিনী', 'সহজপাঠ', 'রাজর্ষি', 'ছেলেবেলা', 'শিশু', 'শিশু ভোলানাথ', 'হাস্যকৌতুক', 'ডাকঘর' প্রভৃতি রচনা শিশু ও কিশোরমনকে আলোড়িত করে। শুধু বাংলা সাহিত্যই নয়, বিশ্বসাহিত্যের আকাশেও রবীন্দ্রনাথ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর 'গীতাঞ্জলি' কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ 'Song Offerings'-এর জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল
পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের
প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন।
তিনি ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় পাঠভবন স্থাপন করেন, যা ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে 'বিশ্বভারতী' বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পগুলি 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের চারটি খণ্ডে সংকলিত হয়েছে।
তাঁর অসংখ্য ছোটোগল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – 'বলাই', 'পোস্টমাস্টার', 'অতিথি', 'ছুটি', 'দেনাপাওনা', 'হৈমন্তী', ‘একরাত্রি', 'শাস্তি'' প্রভৃতি। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উৎস: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি তাঁর ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
সারসংক্ষেপ: আমাদের জীবনে ভালো বা মন্দ যাই আসুক না কেন, যা সত্য তাকে সহজে মেনে নেওয়ার জন্য মনকে বোঝাতে হবে। কোনো ব্যক্তি একজনের কাছে প্রিয় হতে পারে—আবার অন্য কারও কাছ থেকে সে ভালোবাসা না-ও পেতে পারে। কেউ অন্যের জন্য নিজের সর্বস্ব দিতেও পিছপা হয় না, আবার কেউ অন্যের জন্য ভেবেও দেখে না। কারণ প্রতিটি মানুষেরই স্বভাব ও চরিত্র আলাদা হয়। স্বার্থের কারণে কখনও আমরা অন্যদের ঠকাই, আবার কখনও অন্যদের কাছে ঠকে যাই। সুদূর অতীত থেকেই চলে আসছে এইভাবে অল্পবিস্তর মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার পালা। একে এড়িয়ে যাওয়া আমাদের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। জীবনে অনেক সময়ে নানারকম বিপদ-আপদ আসে। কখনও আনন্দের মাঝেও হঠাৎই নেমে আসে বিপর্যয়। তখন তা নিয়ে নিষ্ফল অভিযোগ না করে সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হয়। প্রত্যেক মানুষের স্বভাব অন্যের থেকে আলাদা। তাই কখনোই আশা করা উচিত নয় যে, সবাই আমাদের
মনের মতো হবে। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মানুষে মানুষে এই ভিন্নতার কথা মেনে নিতে পারলেই মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের জটিলতা দূর হয়ে যায়। ফলে জীবনও হয়ে ওঠে সুখের। বস্তুই হোক বা ব্যক্তি, জীবনে কোনো কিছুই অপরিহার্য নয়। ভালোমন্দ মিলিয়ে এই পৃথিবী বাস্তবিকই সুন্দর। এই জীবনও সুখময়। তবে তা উপভোগ করার জন্য বাস্তব পরিস্থিতিকে মেনে নিতে হয়, ভাগ্যকেও স্বীকার করতে হয়।
নামকরণ: যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির অন্যতম প্রধান উপকরণ হল এর নামকরণ। নামকরণের মধ্য দিয়েই স্রষ্টা তাঁর রচনা সম্পর্কে পাঠককে এক আগাম ধারণা দিয়ে থাকেন। 'বোঝাপড়া' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল মীমাংসা বা মানিয়ে নেওয়া। আলোচ্য কবিতায় কবি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, জীবনে ভালোমন্দ যাই আসুক না কেন, বিচলিত না হয়ে সেই সত্যকেই গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র এভাবেই জীবনের নানান দ্বন্দ্ব ও
বিরোধের অবসান ঘটানো সম্ভব। বিভেদ ও সংঘাত, না-পাওয়ার বেদনা চিরকাল ধরে মানবসমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। একে অস্বীকার করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আর সে কারণেই দুঃখে বা সুখে খুব বেশি বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কবি। তাই তিনি বলেছেন—“ভেসে থাকতে পারো যদি/ সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়,/না পারো তো বিনা বাক্যে/টুপ করিয়া ডুবে যেয়ো।” কবির দেখানো পথই হল দুঃখ ও দুঃসহ বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়ার
একমাত্র পথ। নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটালেই দ্বন্দ্ব ও অসংগতিতে ভরা এই পৃথিবীতে শান্তি খুঁজে পাওয়া যাবে। সকলের দিকে বন্ধুর মতো হাত বাড়ালেই প্রকৃত সুখের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। জীবনও তখন হয়ে উঠবে অর্থপূর্ণ। অন্ধকার ঘরে প্রদীপ জ্বলে ওঠার মতোই জীবন তখন স্নিগ্ধ আলোয় ভরে উঠবে। ব্যক্তিগত ক্ষতির কথা ভুলে মনের সঙ্গে এই বোঝাপড়া করে নেওয়ার কথাই কবি এই কবিতায় বলেছেন।
তাই বলা যায়, এদিক থেকে কবিতার ‘বোঝাপড়া' নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে বলবে আমার মনে হয়।
হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন্ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন?
উত্তর: জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত 'ভারতী' ও 'বালক' পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।
১.২ ভারতের কোন্ প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় ?
উত্তর: ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।
২. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ “সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।”— কোটি সবার চেয়ে শ্রেয় ?
উত্তর: কবির মতে, জীবনের খারাপ সময়ে অথবা বিপদের সময়ে ভেঙে না পড়ে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। চলার পথে এই মানিয়ে
নেওয়াই সবার চেয়ে শ্রেয়।
২.২ “ঘটনা সামান্য খুবই।”—কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : মানুষের জীবন অনিশ্চিত। কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায়, যা মানুষকে দিশেহারা করে তোলে। কিন্তু সেইসব ঘটনা এমনও নয় যে, তা আর কারও জীবনে ঘটেনি। এই সহজ ব্যাপারটিকেই এখানে 'সামান্য' ঘটনা বলা হয়েছে।
২.৩ “তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।”
—উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করো।
উত্তর: জীবনে আমরা যা চাই, সব সময় তা পাই না। না পাওয়ার বেদনা আমাদের মনকে বিষণ্ণ করে তোলে। আমরা যদি আমাদের সামর্থ্যের সঙ্গে চাহিদাগুলির সামঞ্জস্য বজায় রাখি, তবে জীবনে সহজেই সুখী হওয়া যায় ।
২.৪ “মরণ এলে হঠাৎ দেখি/মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।”—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষ কখনো -কখনো জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে মৃত্যু কামনা করে। সে মনে করে মৃত্যুতেই বুঝি সব দুঃখের
অবসান। কিন্তু মৃত্যু যখন সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন মানুষ আকুল হয়ে ভাবে, এ জীবন বড়ো সুন্দর। মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে থাকার মধ্যেই
রয়েছে জীবনের সার্থকতা।
২.৫ “তাহারে বাদ দিয়েও দেখি/বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।”—উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন্ সত্য প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: এই বিশ্বসংসারে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। প্রিয়জনের বিচ্ছেদে কোনো ব্যক্তি গভীর শোক পেলেও বিশ্বসংসার কিন্তু তার স্বাভাবিক নিয়মেই চলে। কারণ ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র চাওয়া-পাওয়া, মোহ বা আসক্তির চেয়েও মানবজীবন মহত্তর। জীবনের এই সহজ এবং সর্বজনীন সত্যটিই
প্রশ্নে উদ্ধৃত পক্তি দুটির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে।
২.৬ কীভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে ?
উত্তর: জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে অনেক ফারাক থাকে। যদি আমরা চাহিদার ওপর বেশি নজর দিই ও ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলো নিয়ে হাহাকার করতে থাকি, তাহলে কোনোদিনই জীবনে সুখী হতে পারব না। আমাদের সুখী থাকার উপকরণটুকুও জীবন থেকে তখন হারিয়ে যাবে। তাই না- পাওয়ার কষ্ট ও হতাশা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঝেড়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে খানিক কেঁদে মনের বোঝা হালকা করে নিতে হবে। এভাবেই নিজেদের মনকে বশে রাখতে হবে।
২.৭ “দোহাই তবে এ কার্যটা/যত শীঘ্র পারো সারো।” –কবি কোন্ কার্যের কথা বলেছেন? সেই কার্যটি শীঘ্র সারতে হবে, কেন ?
উত্তর: উদ্দিষ্ট কার্য: মিথ্যা অহংকার আর আমিত্বে পূর্ণ মানুষ নিজেকে অন্য মানুষজনের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে একা হয়ে
যায় সে। এমন মানুষ যত তাড়াতাড়ি নিজের ভুল বুঝতে পারে, ততই মঙ্গল। ‘এ কার্যটা' বলতে এই ভুল বুঝে নিজেকে শুধরে নেওয়ার কথাই
বলা হয়েছে।
শীঘ্র শেষ করার কারণ: ভুল শুধরে নেওয়ার কাজটি মানুষকে যত শীঘ্র সম্ভব সারতে হবে। কারণ, মানুষের জীবনের ব্যাপ্তি কম। সেই স্বল্প
পরিসরেই ভুল ত্রুটি শুধরে নিজেকে ক্ষুদ্র গন্ডির বাইরে নিয়ে গিয়ে জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে হবে। এই শুধরে নেওয়ার প্রক্রিয়া মানুষকে নতুনভাবে বাঁচার উৎসাহ দান করবে।
২.৮ কখন আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো সম্ভব ?
উত্তর। জীবনে কেবল ব্যর্থতার হিসাব করে চলা, অন্যের পাওয়ার সঙ্গে, নিজের না পাওয়ার তুলনা করা, হাহাকারে জীবনকে ভরিয়ে তোলা—
এসব অতিক্রম করে মনকে বুঝিয়ে এগিয়ে চলার কাজ শুরু করলে আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো যায়। অর্থাৎ এভাবেই নিজের হতাশাগ্রস্ত জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলা সম্ভব হয়।
২.৯ “ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে/কতটুকুন তফাত হলো।”—এই উদ্ধৃতির মধ্যে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন্ পথের ঠিকানা মেলে ?
উত্তর: চলার পথের হদিশ : মানুষের চেহারা ও প্রকৃতির মতোই তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলোও ভিন্ন ভিন্ন। জীবনে কে কত বেশি পেল, জীবনপথে কে কতখানি এগিয়ে গেল—এইসব তুলনা জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে। তাই পাওয়া-না-পাওয়ার হিসাব ভুলে জীবনকে মঙ্গলময় ও আলোকিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। সেই পথেরই সন্ধান মেলে প্রশ্নে উল্লিখিত উদ্ধৃতিটির মধ্যে।
২.১০ “অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি/এলে সুখের বন্দরেতে,” – ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা' বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: জীবনের নানান ওঠা-পড়াকে অতিক্রম করলে তবেই আমাদের জীবনে সাফল্য আসে। জাহাজ তার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে, অনেক বাধা
অতিক্রম করে বন্দরে আসে। মানুষকেও অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সাফল্য লাভ করতে হয়। এই প্রতিকূল পরিবেশ জয় করাকেই ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা' বলা হয়েছে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো ।
৩.১ “ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে।” —তুমি কি কবির সঙ্গে একমত? জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কীভাবে অতিক্রম করতে চাও ?
উত্তর: আমার মত: “ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে”—‘বোঝাপড়া' কবিতায় কবির উল্লিখিত এই মতামতকে আমি সমর্থন করি।
→ জীবনের বাধা অতিক্রম করার উপায়: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতা পড়ে আমি শিক্ষালাভ করেছি যে, হঠাৎ পাওয়া আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেমন জীবনকে তাচ্ছিল্য করব না, তেমনই সামান্য দুঃখকষ্টে ভেঙেও পড়ব না। এতে জীবনের ছন্দ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। চলার পথে বাধা এলে আমি গুরুজনদের এবং বন্ধুদের পরামর্শ নিতে লজ্জাবোধ করব না। বিপদ বা বাধাকে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। তবুও যদি কখনও দুর্বল হয়ে পড়ি, তবে মহাপুরুষদের জীবনী পাঠ করে মনের জোর বৃদ্ধি করব। জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। কারণ একাত্মবোধই জীবনে সাফল্যলাভের অন্যতম উপায়।
৩.২ “মনেরে আজ কহ যে,/ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে।”—কবির মতো তুমি কি কখনও মনের সঙ্গে কথা বল ?
সত্যকে মেনে নেবার জন্য মনকে তুমি কীভাবে বোঝাবে—একটি পরিস্থিতি কল্পনা করে বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: হ্যাঁ, কবির মতো আমিও মাঝে মাঝে নিজের সঙ্গে মনে মনে কথা বলি।
কাল্পনিক পরিস্থিতির সাহায্যে ব্যাখ্যা: জীবনে আমাদের নানারকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু চলার পথে বাধা পেয়ে থমকে গেলে চলবে না। আমি প্রতিবছর পরীক্ষায় ভালো ফল করি। কিন্তু এমনও হতে পারে, কোনো এক বছর আমি আশানুরুপ ফল করতে পারলাম না। তাই বলে আমি তখন হতাশ হয়ে পড়ব না। বরং ব্যাপারটাকে সহজে মেনে নিয়ে আমি পরীক্ষায় খারাপ ফল হওয়ার কারণটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করব। নিজেকে বোঝাব যে, এই পরীক্ষাই জীবনের শেষ পরীক্ষা নয়। তা ছাড়া আমি উপযুক্ত পরিশ্রম করিনি, তাই আমার পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে। মন থেকে যাবতীয় হতাশা ঝেড়ে ফেলে আমি নতুন উদ্যমে নিজেকে তৈরি করব আগামী পরীক্ষার জন্য।
৩. ৩ “তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।”
-‘তেমন করে' কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। এখানে কবি কী ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন—লেখো।
উত্তর: 'তেমন করে' কথার অর্থ: জীবনে যেমন দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা রয়েছে, তেমনই রয়েছে হঠাৎ করে পাওয়া আনন্দও। শুধু দুঃখ-কষ্টের কথা চিন্তা না করে জীবনটাকে ইতিবাচক দিক থেকে দেখতে হবে। মানুষ দুঃখ পায় তার অতিরিক্ত আশার জন্য। বেশি আশা না করে যদি নিজের জিনিস নিয়ে সুখী হওয়া যায়, তবে জীবনযাপন সহজ হয়ে যায়। এখানে ‘তেমন করে বলতে এভাবেই জীবন কাটানোর কথা বোঝানো হয়েছে।
→ সুখের ধরন: আমরা যদি নিজেদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে পারি, তবে দুঃখ-দুর্দশার সংকীর্ণ জগতের বাইরে থাকা বিশ্বভুবনকে মস্ত বড়ো বলে মনে হয়। তখন আকাশ হয়ে ওঠে আরও নীল, ভোরের আলো হয়ে ওঠে মধুর, মৃত্যুর চেয়ে জীবনকেই অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত বলে মনে হয়। নিজের সুখে সমস্ত জগৎকেই তখন সুখী বলে বোধ হয়।
৪. নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্তদল ও রুদ্ধদল
চিহ্নিত করো—বোঝাপড়া, কতকটা, সত্যেরে, পাঁজরগুলো, বিশ্বভুবন, অশ্রুসাগর
উত্তর:) বোঝাপড়া—বো (মুক্ত) · ঝা (মুক্ত) প (মুক্ত) · ড়া (মুক্ত)
কতকটা—ক (মুক্ত) - তক্ (রুদ্ধ) · টা (মুক্ত)
সত্যেরে—সত্ (রুদ্ধ) · তে (মুক্ত) · রে (মুক্ত)
পাঁজরগুলো—পাঁ (মুক্ত) · জর্ (রুদ্ধ) . গু (মুক্ত) · লো (মুক্ত)
বিশ্বভুবন–বিশ্ (রুদ্ধ) · শো (মুক্ত) · ভু (মুক্ত) · বন্ (রুদ্ধ)
অশ্রুসাগর—অশ্ (রুদ্ধ) · রু (মুক্ত), সা (মুক্ত) · গর্ (রুদ্ধ)
৫. নীচের প্রতিটি শব্দের তিনটি করে সমার্থক শব্দ লেখো—মন,জখম, ঝাপ্টা, ঝগড়া, সামান্য, শঙ্কা, আকাশ
উত্তর: মন > চিত্ত, হৃদয়, অন্তর
জখম > আহত, বিক্ষত, আঘাতপ্রাপ্ত
ঝাপ্টা > ঝড়, ঝটিকা, তুফান
ঝগড়া > কলহ, বিবাদ, তর্কাতর্কি
সামান্য > অল্প, কম, নগণ্য
শঙ্কা > ভয়, ডর, আতঙ্ক
আকাশ > গগন, অম্বর, আশমান
