বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ভারত || প্রবন্ধ রচনা - school book solver

Friday, 31 October 2025

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ভারত || প্রবন্ধ রচনা

 




প্রবন্ধ
বিশ্বক্রীড়াঙ্গনে ভারত


ভূমিকা : ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দেহে-মনে সর্বাঙ্গীণভাবে বিকশিত করার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চায়
উৎসাহ দেওয়ার প্রচেষ্টা ভারতবর্ষের বর্তমান পাঠ্যক্রমে লক্ষ করা যায়। এর প্রত্যক্ষ প্রতিফলন দেখা যায় আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে। নানান দিক থেকে পিছিয়ে পড়া, এমন কিছু দেশ আছে যারা শুধুমাত্র প্রচেষ্টা ও অভ্যাসকে হাতিয়ার করে খেলাধুলায় বিশ্বজোড়া কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে। খেলাধুলাই বিশ্বের মানুষের কাছে ওইসব দেশের পরিচিত এনে দিয়েছে। কাজেই ভারত সরকারের উচিত বিদ্যালয় স্তর থেকে খেলাধুলার প্রতিভা অন্বেষণ করে তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
খেলাধুলার উপযোগিতা: সুস্থ দেহেই অবস্থান করে সুস্থ মন। মনই হল সকল প্রকার ক্ষমতা, প্রাণশক্তি ও উৎসাহ-উদ্দীপনার উৎস।
জীবনসংগ্রামে লড়ে জেতার জন্য চাই মনের জোর। ব্যক্তিগত খেলাধুলা ও শরীরচর্চা বাদ দিলেও যেটা পড়ে থাকে, তা হল চিত্ত-বিনোদনের দিক খেলার মাঠে হাজার হাজার দর্শকের উৎসাহ-উদ্দীপনা খেলোয়াড়ের মনের
জোর বাড়িয়ে তোলে। জয়-পরাজয় দুইই সহজে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়।
ভারতের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা: আমরা ভারতবাসীরা নিতান্তই ক্রীড়াপাগল। তা সে ক্রিকেট, ফুটবল বা টেনিসের মতো চূড়ান্ত জনপ্রিয় খেলাই হোক বা আমাদের একান্ত নিজস্ব হাডুডু, খো খো, ক্যারাম, তাস, বা লুডোই হোক। ভারতবাসীর উৎসাহ ও অংশগ্রহণ সর্বত্রই দেখার মতো। ভারতের প্রতিনিধিত্ব এককভাবে বা দলগতভাবে জাতীয়, মহাদেশীয়, এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরের খেলাগুলিতেও অবশ্যই থাকে। যেমন, এশিয়া মহাদেশের দেশগুলির মধ্যে এশিয়ান গেমস বা এশিয়াড, ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে অনুষ্ঠিত সাফ গেমস ইত্যাদি সব জায়গাতেই ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও স্থানলাভ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিশ্চিত।
বিশ্বক্ৰীড়াপনে ভারত: ভারতবর্ষ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং জয়লাভ করলেও এক্ষেত্রে ভারতের সামগ্রিক চিত্রটি বড়োই করুণ। অলিম্পিকে ভারত একমাত্র হকিতেই নিজের স্বর্ণপদকের সম্মান রক্ষা করতে পারত। অবশ্য বিগত কিছু বছরে সেই সম্মানটুকুও তাদের হাতছাড়া হয়েছে। তবে খেলাধুলার ইতিহাসে ভারতের অবদান নেহাত কম নয়। টেনিসে লিয়েন্ডার পেজ, ভারোত্তোলনে মালেশ্বরী, রাইফেল শ্যুটিং-এ রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর, অ্যাপালেটিকসে মিলখা সিং, পিটি
ঊষা, জ্যোতির্ময়ী শিকদার, দাবার বিশ্বনাথন আনন্দ, সূর্যশেখর গাঙ্গুলি প্রমুখ বহু বছর ধরে আমাদের দেশকে গর্বিত করেছেন। বর্তমান সময়ে ব্যাডমিন্টনে পিভি সিন্ধু, সাইনা নেহওয়াল, অ্যাথলেটিকসে হিমা দাস, জিমন্যাস্টিকসে দীপা কর্মকার ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন। ক্রিকেট খেলার কপিল দেব, শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি প্রমুখের নেতৃত্বে ভারত নিরবচ্ছিন্নভাবে কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে।
খেলাধুলায় ভারতের অনগ্রসরতার কারণ: খেলাধুলার ভারতের ব্যর্থতার পিছনে নানাধরনের কারণ রয়েছে। প্রথমত, বেশিরভাগ ভারতীয়
অভিভাবক এখনও তাঁদের সন্তানের খেলাধুলাকে পড়াশোনার মতো গুরুত্ব দেন না। তা ছাড়া সরকারি উদ্যোগে গঠিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভাবও একটি বড়ো কারণ। সুদূর গ্রামগঞ্জ থেকে শহরের হাতে গোনা কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রশিক্ষণের ব্যয় কমানোর দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। মূলত পরিকাঠামো ও কথাবদ্ধ মানসিকতার অভাবই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতকে পিছিয়ে রেখেছে।
উপসংহার: সরকারি ঔদাসীন্য তথা দেশবাসীর অবহেলা আন্তর্জাতি ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে ক্রমশ পিছিয়ে দিচ্ছে। না হলে প্রতিভার অভাব ভারতবর্ষে কোনোদিনই ছিল না, আজও নেই। প্রয়োজন শুধু সেইসব প্রতিভাকে তুলে এনে সঠিক পরিকাঠামোর মধ্যে যথার্থ প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার।