প্রবন্ধ রচনা || তোমার দৃষ্টিতে একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী - school book solver

Wednesday, 29 October 2025

প্রবন্ধ রচনা || তোমার দৃষ্টিতে একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী

 


প্ৰবন্ধ রচনা
তোমার দৃষ্টিতে একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী


ভূমিকা : আমাদের দেশের স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে যেসব মানুষ ব্যক্তিগতস্বার্থ ত্যাগ করে দেশের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন,
সুভাষচন্দ্র বসু তাদের মধ্যে অন্যতম। ভারতের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা সোনার অক্ষরে লেখা আছে। বাঙালি তথা সমগ্র ভারতের
মানুষের মনে তিনি 'নেতাজি' রূপে অমর হয়ে আছেন। মেধা, সাহস এবং দেশপ্রেমের এক যথার্থ মিশ্রণ ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বে। তিনি পরাধীন ভারতবাসীর ভীত, সংকুচিত হৃদয়ে সাহসিকতার আগুন জ্বেলে দিয়েছিলেন।
জন্ম, বাল্যকাল ও শিক্ষা: সুভাষচন্দ্র ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জানকীনাথ বসু। সুভাষচন্দ্রের পৈতৃক বাসস্থান ২৪ পরগনা জেলার কোদালিয়া গ্রামে। তিনি কটকের র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থানে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে স্নাতক (বিএ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। কিন্তু দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তিনি সরকারি চাকরির মোহ ত্যাগ করেন।
দেশপ্রেম ও কর্মজীবন: পৃথিবীর মানুষের কাছে সুভাষচন্দ্র একজন মহান দেশপ্রেমিক হিসেবেই পরিচিত হয়ে আছেন। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন যখন নখদন্ত বিস্তার করে হিংস্র হয়ে উঠেছিল, তখন দেশের প্রয়োজন ছিল তাঁর মতো একজন নেতার, যাঁর আহ্বানে শত শত মানুষ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হবে। সুভাষচন্দ্র দেশবাসীকে আহ্বান জানান— “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” তাঁর লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ইংরেজশক্তিকে পরাজিত করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন।
এর জন্য তাঁকে বহুবার কারারুদ্ধও হতে হয়। তিনি ‘ফরোয়ার্ড ব্লক' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সুভাষচন্দ্র
ভারতের স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাস ও দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তিনি গোপনে দেশত্যাগ করেন। জাপানে গিয়ে তিনি 'আজাদ হিন্দ ফৌজ নামক সেনাবাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনীর সাহায্যে ভারতীয় ভূখণ্ডের কিছুটা অংশ তিনি স্বাধীন করেন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় ঘটলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অগ্রগতি রুদ্ধ হয়। এই সময় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর অকালমৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর তাঁর আর কোনো সন্ধান মেলেনি। এই নিয়ে ভারতবাসীর মনে আজও অনেক সন্দেহ রয়েছে।
উপসংহার ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্রের অবদান চিরস্মরণীয়। দেশবাসীর কাছ তিনি আজও পরম শ্রদ্ধেয় 'নেতাজি' রূপে
স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।