মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র || ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / Matir ghare deyal chitra || class 6 bangla || question answee - school book solver

Monday, 2 June 2025

মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র || ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / Matir ghare deyal chitra || class 6 bangla || question answee

 



ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা
মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র

তপন কর


বিষয়বস্তু : পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, মানভূম ইত্যাদি জেলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত আদিবাসীদের মহিলারা বিশেষ করে সাঁওতাল রমণীরা দেয়ালচিত্র অঙ্কনে অত্যন্ত পারদর্শী। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা এবং কার্তিক মাসের অমাবস্যায় কালীপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষ্যে সাঁওতাল রমণীয়া তাদের মাটির ঘরের দরজার ওপরে এবং দুই পাশে সাধারণত চিত্রাঙ্কন করে থাকেন। গেরুয়া মাটিতে গিরিফল চুবিয়ে একজাতীয় বিশেষ রং তারা তৈরি করেন। সাধারণত মাটি থেকে ছয় ফুট উচ্চতায় এজাতীয় চিত্র অঙ্কিত হয়। এই জাতীয় চিত্রাবলি জ্যামিতিক আকারবিশিষ্ট হয়ে থাকে। কখনও ত্রিভুজাকার কখনও চতুষ্কোণ বিশিষ্ট আবার কখনো-কখনো সমান্তরাল রেখার মাধ্যমেও এগুলি আঁকা হয়।
আদিবাসীদের মধ্যে সাঁওতাল ব্যতীত অন্যান্যরা মূলত পদ্মফুলকেই চিত্রাঙ্কনের প্রধান উপকরণ হিসাবে বেছে থাকেন। সেজন্যই পদ্মফুলকে মানভূম দেয়ালচিত্রের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এজাতীয় চালচিত্রে আবার মোরগঝুঁটিও দেখা যায়। নকশা হিসাবে শূন্য স্থানগুলিকে ভরাট করার জন্য পদ্মফুল, ইস্কাবন, হরতন ইত্যাদি চিহ্ন কিংবা লতাপাতা পাখি, ময়ূর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই চিত্রাবলি কখনও রঙিন আবার কখনও বর্ণহীন হয়ে থাকে।
কেবলমাত্রই মানুষের বাসগৃহেই নয় যে-কোনো প্রাচীর বা দেয়ালের প্রকাশ্য স্থানে এই চিত্র অঙ্কন করা হয়ে থাকে।

উৎস : আমাদের পাঠ্যতালিকাভুক্ত 'মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র' প্রবন্ধটি লেখকের 'মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র' নামে একটি প্রবন্ধের সংক্ষেপিত ও সম্পাদিত অংশ।

হাতেকলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর

১.১ লেখক তপন করের লেখা একটি বই এর নাম লেখে।
উত্তর।  তপন করের লেখা একটি বই এর নাম ছবি আঁকতে শেখা।

১.২ পাঠ্যরচনাংশটি কোন্ বিষয়ে লেখা?
উত্তর। পাঠ্যরচনাংশটি বিষয়বস্তু হল মাটির ঘরের দেয়ালে ছবি আঁকা বিষয়ে লেখা।

২. ঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে লেখো :
২.১ দেয়ালচিত্র এঁকে থাকেন সাধারণত গ্রামের (পুরুষেরা/মেয়েরা/বালকেরা)।
উত্তর। মেয়েরা।

২.২ মূলত (বৃত্তাকার/সরলরৈখিক/জ্যামিতিক) আকার আশ্রিত বর্ণসমা বেশেই রচিত হয় সাঁওতালি দেয়ালচিত্রণ।
উত্তর। জ্যামিতিক।

২.৩ সাধারণত মাটি থেকে (ছফুট/চারফুট/আটফুট) পর্যন্ত উচ্চতায় চিত্রণটি বিস্তৃত হয়।
উত্তর। ছফুট।

২.৪ (শালুকটিকে/পদ্মটিকে/গোলাপটিকে) মানভূম দেয়ালচিত্রের প্রতীক বলা হয়।
উত্তর। পদ্মটিকে।

৩. পাঠ থেকে একই অর্থের শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো : ছবি, জোগাড়, পঙ্কজ, পুষ্প, মাটি।
উত্তর। ছবি—চিত্র।
জোগাড়—সংগ্রহ।
পঙ্কজ — শতদল/পদ্ম।
পুষ্প –ফুল।
মাটি—মৃত্তিকা।

৪. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো।

উত্তর।
বিশেষ্য  > বিশেষণ
ভূগোল  >  ভৌগোলিক
নির্বাচন। >  নির্বাচিত
অঞ্চল  > আঞ্চলিক
রচন। >  রচিত
অলংকার  >  অলংকৃত
জ্যামিতি  >  জ্যামিতিক

৫. তোমাদের এই পাঠ্যাংশ থেকে দুটি জটিল বাক্য লেখো যারা যুক্ত আছে ‘যেমন-তেমন', দিয়ে। এ ছাড়া, ‘যদি-তবে’, ‘যখন-তখন’, ‘যে-সে’, ‘যেখানে-সেখানে', ‘যেদিন- সেদিন' ইত্যাদি ব্যবহার করে একটি করে জটিল বাক্য লেখো।
উত্তর। যেমন-তেমন—(১) সেই চিত্রণের বিষয়বস্তু যেমন নিজেরা নির্বাচন করেন, তেমনি তার উপাদানও নিজেরাই সংগ্রহ করেন।
(২) এতে যেমন দেখা যায় চওড়া রঙিন ফিতের মতো সমান্তরাল রেখা তেমনি থাকে চতুষ্কোণ ও ত্রিভুজের ছড়াছড়ি।

যদি-তবে—যদি তুমি আমার বাড়ি থাকো,তবে যাব।

যখন-তখন –বিনা অনুমতিতে যখন-তখন অন‍্যের প্রবেশ করা অনুচিত।
যে-সে- কাজলবাবু যে সে লোক নন, তিনি গ্রামের প্রধান।
যেখানে-সেখানে যেখানে সেখানে আবজর্না ফেললে রোগ ছড়ায়।
যেদিন-সেদিন—যেদিন আমার ইস্কুল থেকে ছুটি হল, সেদিন আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

৬. নীচের বাক্যগুলি জুড়ে একটি বাক্যে পরিণত করো :
৬.১ এই মাটির রং ঈষৎ হরিদ্রাভ। এই মাটির রং ঈযৎ সাদাটে।
উত্তর। এই মাটির রং ঈযৎ হরিদ্রাভ এবং ঈযৎ সাদাটে।

৬.২ দূর থেকে দৃশ্য হিসাবে মানানসই হওয়া চাই। এইভাবেই দেয়ালগুলি নির্বাচন করা হয়।
উত্তর। দেয়ালগুলি নির্বাচন করার সময় দূর থেকে দৃশ্য হিসাবে মানানসই হবার বিষয়ে খেয়াল রাখা হয়।

৬.৩ ঘরের চতুষ্পার্শ্ব ঘিরে থাকে একটি বেদি। তার রং কালো।
উত্তর। ঘরের চতুষ্পার্শ্ব ঘিরে থাকা বেদিটি কালো রং এর হয়।

৬.৪ বাংলার কৃষিজীবী সমাজের কিছু প্রাচীন উৎসব আছে। এগুলি হল গো-বন্দনা, কাঁড়াখুঁটা, গোরু খুঁটা প্রভৃতি।
উত্তর। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের প্রাচীন উৎসবগুলির মধ্যে গোবন্দনা, কাঁড়াখুঁটা, গোরুখুটা ইত্যাদি অন্যতম।

৭. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৭.১ তোমার জানা কোন অঞ্চলের লোকসমাজে দেয়ালে ছবি আঁকার চল আছে?
উত্তর। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলায় এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে লোকসমাজের দেয়ালে ছবি আঁকার চল আছে।

৭.২ মানভূম জেলা সংলগ্ন আর কোন্ কোন্ জেলায় দেয়াল চিত্রণ হয়ে থাকে?
উত্তর। মানভূম জেলা সংলগ্ন বীরভূম জেলায়, বর্ধমান জেলার পশ্চিমাংশে এবং বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের কিছু অঞ্চলে দেয়াল চিত্রণের চল আছে।

৭.৩ মানভূম জেলায় কোন্ কোন্ আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস ?
উত্তর। মানভূম জেলায় মূলত সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, হো, ভূমিজ,  খেড়িয়া, শবর, কোল ইত্যাদি আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস আছে।

৭.৪ মাটির দেয়াল চিত্রগুলি সাধারণত কোন্ কোন্ উৎসবে আঁকা হয় ?
উত্তর। সাধারণত দুর্গাপূজা, কালীপূজা এবং দীপাবলি উৎসবকে কেন্দ্র করে মাটির বাড়ির দেয়ালে চিত্রগুলি আঁকা হয়।

৭.৫ দেয়াল চিত্র করার জন্য কী কী উপাদান ব্যবহৃত হয় ?
উত্তর। দেয়াল চিত্র করার জন্য লালচে গেরুয়া মাটি এবং গিরিফল ব্যবহৃত হয়।

৭. কোন্ তিথিতে কৃষিজীবীরা কীভাবে তাদের গৃহসজ্জা করে তা লেখো।
উত্তর। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে বা কালীপূজার সময় কৃষিজীবীরা তাদের গৃহসজ্জা  করে।
তারা তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করে লেপাপোছা করে। পরিষ্কার গৃহাঙ্গনে দরজা, উঠান, গোহাল, ধানের গোলা এবং মূল বাসগৃহকে বিচিত্র বর্ণের আল্পনার মাধ্যমে সাজিয়ে তোলে সুন্দর করে।

৭.৭ কোন্ কোন্ জাতির দেয়াল চিত্রের সাধারণ লক্ষণ পদ্ম ?
উত্তর। ভূমিজ, কুর্মি বা অন্যান্য জাতির আদিবাসীরা দেয়াল চিত্রের সাধারণ লক্ষণ  পদ্ম।

৭.৮ দুধেমাটির ওপর কীভাবে চিত্রণ করা হয় ?
উত্তর। অত্যন্ত মসৃণভাবে লেপাপোছা করা দেয়ালে দুধেমাটির  ভিজে প্রলেপ লাগানো হয়। তার উপর হাতের আঙুলের ডগা ব্যবহার করে দাগ টেনে চিত্রণ করা হয়ে থাকে।

৭.৯ মোরগঝুঁটির চালচিত্রে আর কী কী নকশা থাকে?
উত্তর। মোরগঝুঁটির চালচিত্রকে মাঝখানে রেখে তার ধারে ধারে সার দিয়ে সূর্য, পদ্ম, ইস্কাবন, হরতন, সাধারণ লতাপাতা, পাখি, ময়ূর, ইত্যাদির নকশা থাকে।

৭.১০ বৃত্তাকার একটি নকশা বা আলপনা আঁকো যা তোমার বাড়িকে আরও সুন্দর করবে বলে মনে হয়।
উত্তর। নিজে করো ।

শব্দার্থ : নির্বাচন-বাছাই করা।
উপাদান – উপকরণ।
সংগ্রহ - জোগাড়।
পুরুল্যা-পুরুলিয়া।
বিস্তীর্ণ—বিশাল / প্রশস্ত।
পীঠস্থান–কেন্দ্র।
সংলগ্ন পাশাপাশি।
উন্নত—উৎকৃষ্ট।
সুলভ -যা সহজে মেলে।
অলংকার-গহনা।
মৃত্তিকা —মাটি।
দ্বার—দরজা।
শীর্ষে -মাথায় ওপরে।
মার্জনা পরিষ্কার করা।
গৃহাঙ্গন – বাড়ির উঠান।
ক্রমাগত—পরপর।
বর্ণে-রঙে।
বিকশিত—প্রস্ফুটিত।
পুষ্প – ফুল।
শতদল—পদ্ম।
মোটিয়া — মনোভাব।
সমাবেশ — জমায়েত।
হরিদ্রাভ— হলদে।
প্রাচীরগাত্র - পাঁচিলের গা।